টাকা-গয়না চেয়ে কোপ বাবা-মাকে

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাধবীতলায় দীর্ঘদিনের হার্ডঅয়্যারের জিনিসের ব্যবসা বছর ছিয়াত্তরের তাপস মল্লিকের। প্রতিবেশী ও পরিজনদের দাবি, ব্যাঙ্কে রাখা টাকা ও গয়নার দাবিতে একমাত্র ছেলে, বছর সাতচল্লিশের অমিত মল্লিকের সঙ্গে মাস ছয়েক ধরে অশান্তি চলছিল তাপসবাবুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

বাড়ির পাঁচিল থেকে বৃদ্ধকে উদ্ধারে পড়শিরা। বুধবার কাটোয়ায়। নিজস্ব চিত্র

রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির পাঁচিলে বসেছিলেন বৃদ্ধ। দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করতে গেলে বৃদ্ধ জানান, রড-ধারাল অস্ত্র দিয়ে একমাত্র ছেলে এই অবস্থা করেছে তাঁর। শুধু তিনি নন, ছেলের হাতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি থেকে কোনওমতে বেরিয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী।

Advertisement

কখনও বাড়িতে তালা দিয়ে বেড়াতে চলে যাওয়া, কোথাও আবার সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তাড়িয়ে দেওয়া— বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে হামেশাই। দিন কয়েক আগে দাঁইহাট স্টেশন থেকে উদ্ধার এক অশীতিপর বৃদ্ধ অভিযোগ করেন, ছেলে-মেয়ে বাড়িতে রাখতে চায়নি তাঁকে। বুধবার কাটোয়ার মাধবীতলায় ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে টাকা-গয়নার জন্য তাঁদের ছেলে কোপায় বলে অভিযোগ। বাবাকে দীর্ঘক্ষণ ঘরে আটকেও রাখে। পড়শিদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার চিকিৎসা করানো হয় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাধবীতলায় দীর্ঘদিনের হার্ডঅয়্যারের জিনিসের ব্যবসা বছর ছিয়াত্তরের তাপস মল্লিকের। প্রতিবেশী ও পরিজনদের দাবি, ব্যাঙ্কে রাখা টাকা ও গয়নার দাবিতে একমাত্র ছেলে, বছর সাতচল্লিশের অমিত মল্লিকের সঙ্গে মাস ছয়েক ধরে অশান্তি চলছিল তাপসবাবুর। অভিযোগ, এ দিন সকালে ব্যাঙ্কে রাখা সোনা ও টাকা তোলার জন্য মা বুলুরানিদেবীর কাছে লকারের চাবি চায় অমিত। বুলুরানিদেবী তা দিতে রাজি হননি। তার পরেই রড ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় অমিত। তাপসবাবু ও বুলুরানিদেবীর মাথায় কোপ মারে সে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরে তাপসবাবুকে দোতলার ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে নিজের ঘরে বসেছিল অমিত। বুলুরানিদেবী বাড়ি থেকে কোনওমতে বেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানে চিকিৎসা করানোর পরে থানায় যান তিনি। এরই মধ্যে বৃদ্ধ তাপসবাবু ঘরের অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে একতলার কার্নিসে নেমে পড়েন। সেখান থেকে বাড়ির পাঁচিলের উপরে বসেছিলেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে সেখানে বসে থাকতে দেখে পড়শিরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় অমিতকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে এমন আচরণের কারণ কী, পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময়ে এ ব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি সে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বীরভূমের কীর্ণাহারের একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন অমিত। মাস ছয়েক আগে বাবা হার্ডঅয়্যারের ব্যবসা সামলানোর জন্য চাকরি ছড়ে দেয়। তাপসবাবু অভিযোগ করেন, মাস ছয়েক আগে টাকা না পেয়ে তাঁর পা ভেঙে দিয়েছিল ছেলে। নিত্য অশান্তির জন্য বাড়িতে থাকেন না অমিতের স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলেও। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তাপসবাবু বলেন, ‘‘মাস চারেক আগে ওকে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। তার পরেও শুধু ব্যাঙ্কের লকারের চাবি চাইত। সেই চাবি ওর কাছেই রয়েছে। ওর মা সে কথা বললেও বিশ্বাস করে না। আজ এ ভাবে আমাদের কোপাল!’’ তাঁর দোকানের কর্মী মনোতোষ আচার্য বলেন, ‘‘অশান্তি হতো। কিন্তু তা বলে এমন কাণ্ড হবে আমরা কেউ ভাবিনি!’’

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলেই গ্রেফতার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন