অথৈ জলে নিহতের পরিবার, খুনে ধৃত ১

কোকআভেন থানার স্টেশন রোডের ধারে একটি পেট্রোল পাম্প লাগোয়া এলাকায় সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় পার্কিং জোনের কর্মী বিষ্ণুকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০২:১১
Share:

শোকস্তব্ধ বিষ্ণুর পরিবার। দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান

বাড়িতে আরও জনা ছয়েক সদস্য। সংসার চলত শুধু তাঁর আয়েই। দুর্গাপুরের পার্কিং জোনের কর্মী বিষ্ণু থাপা দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হওয়ার পরে অসহায় অবস্থায় পড়েছে তাঁর পরিবার। ঘটনার পরে প্রায় দু’দিন কেটে গেলেও মূল অভিযুক্ত দীপক সাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত সন্দেহে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বিজয় শ্রীবাস্তব নামে ওই ব্যক্তিকে ঝাড়খণ্ড থেকে ধরা হয়েছে। গুলি ছোড়ার পরে যে স্কুটিতে করে দীপক পালিয়েছিল বলে অভিযোগ, সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী জানান, মলানদিঘির কাছে স্কুটিটি পাওয়া গিয়েছে। বেশ কিছু সূত্রও মিলেছে। দ্রুত দীপককে গ্রেফতার করা হবে বলে তাঁর আশ্বাস।

কোকআভেন থানার স্টেশন রোডের ধারে একটি পেট্রোল পাম্প লাগোয়া এলাকায় সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় পার্কিং জোনের কর্মী বিষ্ণুকে। অভিযোগ, দীপক কয়েকদিন ধরে বারবার পার্কিং জোনে এসে ৩০ হাজার টাকা চাইছিল। রবিবার থানায় বিষয়টি জানান কর্মীরা। অভিযোগ, পুলিশ উল্টে দীপক এলে তাকে আটক করে আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সোমবার দীপক স্কুটিতে চড়ে পার্কিং জোন চত্বরে এসে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। একটি গুলি লাগে বিষ্ণুর মাথায়। হাতে গুলি লাগে আর এক কর্মীর।

Advertisement

দীপকের বাড়ি ঘটনাস্থলের অদূরে লেবারহাট বস্তিতে। বছর দেড়েক আগে পেট্রল পাম্পে ঢুকে এক ট্রাক চালককে গুলি করে খুন ও টাকা লুটের মামলায় কয়েক মাস আগে পুলিশ বিহার থেকে তাকে গ্রেফতার করে। সম্প্রতি সে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল। সোমবার রাতে দীপককে গ্রেফতারের দাবিতে বিষ্ণুর দেহ থানার সামনে রেখে বিক্ষোভ দেখান পরিজন ও প্রতিবেশীরা। দুষ্কৃতীর পরিচয় পুলিশের জানা থাকা সত্ত্বেও কেন রাত পর্যন্ত তাকে ধরা গেল না, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। থানায় এসে বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালও বলেন, ‘‘অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ সে ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে।’’

গ্রেফতারির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম। বিকেলে পুলিশ জানায়, ঝাড়খণ্ড থেকে বিজয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। বছর কয়েক আগে ডিপিএলে আইএনটিটিইউসি-র ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে ছিল বিজয়। পুলিশের দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, বিজয়ের কথাতেই দীপক পার্কিং জোনে টাকা চাইতে গিয়েছিল। মৃতের পরিজনেরাও দীপকের পাশাপাশি তার নামে অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। দোষীরা ছাড়া পাবে না।’’

এ দিন বিষ্ণুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী মালঞ্চদেবী কেঁদে চলেছেন। মায়ের কোল ঘেঁষে বসে বছর সাতের মেয়ে মনীষা। আর এক মেয়ে, বছর দশেকের রিমা বসে ঠাকুমা পার্বতীদেবীর পাশে। বিষ্ণুর এক দিদিও মেয়েকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকেন। ভাই শ্যাম কয়েক মাস আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। পার্বতীদেবী জানান, পুত্রবধূর কোনও কাজের ব্যবস্থা কেউ করে না দিলে অথৈ জলে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অসহায় হয়ে গেলাম। দুষ্কৃতীদের পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন