দাবি রোগীর মায়ের

জল না দেওয়াতেই নার্সদের মারধর

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছেলে জল চেয়েছিল। কান দেননি নার্সেরা। জ্বরের ঘোরে সেই পরিস্থিতিতেই তাঁর ছেলে নার্সদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন বলে দাবি করলেন অভিযুক্ত রোগী সুবীর সাহার মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৬
Share:

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছেলে জল চেয়েছিল। কান দেননি নার্সেরা। জ্বরের ঘোরে সেই পরিস্থিতিতেই তাঁর ছেলে নার্সদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন বলে দাবি করলেন অভিযুক্ত রোগী সুবীর সাহার মা।

Advertisement

কলকাতার গরচা রোডের এক নার্সিংহোমে বৃহস্পতিবার তিন নার্সকে মারধর করার পরেই পালান সুবীর। শনিবার রাত পর্যন্ত তিনি অধরা। যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, সুবীর কোথায় রয়েছেন, সে ব্যাপারে তাঁরা ওয়াকিবহাল। অসুস্থতার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

এ দিন ফোনে তাঁর মা ধীরা সাহা বলেন, ‘‘ সে দিন পালিয়ে না গেলে ছেলেটার যে চিকিৎসা চলছে, সেটুকুর সুযোগও থাকত না।’’ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য রোগীর জল চেয়ে না পাওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। সেখানকার এগজিকিউটিভ অফিসার রঞ্জিত ঘোষের দাবি, আহত নার্স শিপ্রা মণ্ডল জানিয়েছেন, সুবীর মোটেই জল চাননি। সে দিন তাঁর সঙ্গে তাঁদের কোনও কথাই হয়নি।

Advertisement

গড়িয়াহাট থানার গরচা রোডে ওই নার্সিংহোমে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন বছর আঠাশের সুবীর। সে দিন ভোরে স্যালাইনের স্ট্যান্ড নিয়ে তিনি নার্সদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। শিপ্রাদেবী ছাড়াও মার্গারেট মণ্ডল ও ভিক্টোরিয়া থকচম নামে দুই নার্স জখম হন। শিপ্রাদেবীর অভিযোগ, ভোরে ৪টে নাগাদ তিনি টেবিলে মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ ওই রোগী স্যালাইনের রড দিয়ে তাঁর মাথায় মারেন সুবীর। দু’বার বাড়ি খেয়ে কোনও রকমে মাথা ঘুরিয়ে রডটি ধরে ফেলেন তিনি। তার আগেই অন্য দুই নার্সকে আহত করেছেন সুবীর। ঘটনার পরেই তিনি নার্সিংহোম থেকে চম্পট দেন।

সুবীরের বাড়ি বর্ধমানের মঙ্গলকোটের যবগ্রামে। মাকে নিয়ে মাটির একচালা বাড়িতে থাকেন তিনি। এ দিন গিয়ে দেখা গেল, সেই বাড়িতে তালা ঝুলছে। পড়শিরা জানান, সুবীর একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কেন্দ্র চালাতেন। শান্ত, নির্বিবাদী হিসেবেই এলাকায় তিনি পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা মন্দিরা সাঁতরা, মাখন পণ্ডিতরা বলেন, ‘‘ও কী ভাবে এমন কাণ্ড করল, বুঝতে পারছি না! হয়তো জ্বরের বিকারে করে ফেলেছে।’’ সুবীরের মামা দিলীপ সাহাও বলেন, ‘‘যে ছেলে গ্রামে কখনও কারও গায়ে হাত তোলেনি, সে এমন করেছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!’’

ফোন করা হলে ধীরাদেবী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ছেলে নার্সদের কাছে জল চেয়েছিল। তাঁরা দেননি। জ্বরের ঘোরেই ও এমনটা করে ফেলেছে।’’ সুবীর পুলিশের হাতে ধরা দেবে কি না, সে প্রশ্নে মায়ের বক্তব্য, ‘‘ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সে দিন ওখান থেকে ওকে নিয়ে পালিয়ে না এলে বাঁচাতে পারতাম না। আগে ও সুস্থ হোক। তার পরে অন্য সব কিছু ভাবা যাবে।’’ এখন তাঁরা কোথায় রয়েছেন ধীরাদেবী তা না ভাঙলেও সাহা পরিবারের ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে এক আত্মীয়ের আশ্রয়ে আপাতত রয়েছেন মা-ছেলে। পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, এই তথ্য ঠিক নাও হতে পারে।

আহত নার্স শিপ্রা মণ্ডল গরচা রোডের নার্সিংহোমেই ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। অন্য দু’জন মল্লিকবাজারের একটি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। মার্গারেটের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনের বাইরে আনা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া ভেন্টিলেশনে থাকলেও তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে না পারায় তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে শুক্রবারই জানিয়েছিলেন শিপ্রাদেবী। পুলিশ অবশ্য জানায়, সুবীরের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ চালানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের কর্তাদের দাবি, তাঁদের নজর এড়িয়ে ওই রোগীর দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ‘‘এখনই এর থেকে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না’’, মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন