নলকূপের জল পান বাধ্য হয়েই

কৃষিপ্রধান এলাকায় চাষের জন্য মাটির তলা থেকে তোলা হয় প্রচুর জল। আর সেটাই বিপদ বাড়িয়েছে। পূর্বস্থলীর নানা এলাকায় জলে আর্সেনিকের প্রভাবের পিছনে এমন কারণই দেখেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কৃষিপ্রধান এলাকায় চাষের জন্য মাটির তলা থেকে তোলা হয় প্রচুর জল। আর সেটাই বিপদ বাড়িয়েছে। পূর্বস্থলীর নানা এলাকায় জলে আর্সেনিকের প্রভাবের পিছনে এমন কারণই দেখেন বিশেষজ্ঞেরা। পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে আর্সেনিকোসিস রোগে মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছু মানুষের। আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন আরও অনেকে। তাঁদের দাবি, বছরের পর বছর এই সমস্যা নিয়ে উদাসীন প্রশাসন।

Advertisement

প্রায় তিন দশক আগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাদ্রা গ্রামে আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রথম খবর মেলে। একে-একে ওই পরিবারে সাত জনের মৃত্যু হয়। এর পরেই বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিশে থাকার কথা জানতে পারে প্রশাসন। তবে কোনও ব্যবস্থা নিয়ে ওঠার আগেই মৃত্যু হয় আরও অনেকের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ছ’টি, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ১০টি, কালনা ২ ব্লকের একটি এবং কাটোয়ার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের নমুনা পাওয়া যায়। বছর পাঁচেক আগে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে পূর্বস্থলী থেকে জল তুলে পরীক্ষা করা হয়। তাতে জানা যায়, আর্সেনিক ছাড়াও বেশ কিছু ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে জলে। এলাকাবাসীর দাবি, এক দশক আগেও আর্সেনিক নিয়ে সচেতনেতার প্রচার-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আর কোনও উদ্যোগ নেই।

Advertisement

আর্সেনিকোসিস থেকে বাঁচতে প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানীয় জল। সে জন্য পূর্বস্থলী ২ ব্লকে কোমলনগর এলাকায় ভাগীরথীর জল শোধন করে জল সরবরাহের উদ্যোগ হয়। কিন্তু সেই জল সব মৌজায় পৌঁছয় না। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের আর্সেনিক অধ্যুষিত শ্রীরামপুর, দোগাছিয়া, সমুদ্রগড়-সহ বেশ কিছু এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প হলেও অনেক প্রকল্পে জলাধার নেই। ফলে, বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে নলকূপের জল পান করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান প্রণব রায় বলেন, ‘‘বলদেডাঙা, মাদ্রা, গোকর্ণ-সহ পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ জায়গায় মাটির তলার জলে মিশে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। মাটির গভীর থেকে জল তুলে না খেলেই বিপদ। যে সমস্ত নলকূপের জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে সেগুলি লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।’’ যেখানে জনসাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প নেই বা প্রকল্প থাকলেও জলাধার নেই, সেখানে নানা সময় মানুষকে বাধ্য হয়েই নলকূপের জল পান করতে বলে মেনে নেন তিনি।

আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকার জল পরীক্ষার জন্য নানা এলাকায় নানা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থাগুলি পর্যায়ক্রমে সরকারি নলকূপের জল পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয় প্রশাসনকে। ফলে, বাড়ির নলকূপগুলির জল পরীক্ষা করা হয় না। একটি সংস্থার অভিযোগ, মাঝে-মধ্যে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব হয়। তখন পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়।

আর্সেনিক নিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি, এ কথা মানতে নারাজ জেলা পরিষদ। বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘নিয়মিত জল পরীক্ষা করানো হয়। বেসরকারি নলকূপের সংখ্যা কম। তবে সেগুলির জলও যাতে পরীক্ষা করা হয়, সে নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরির দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন