ঝুঁকি: এ ভাবেই চলে খেয়া পারাপার। নিজস্ব চিত্র
কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য হোক বা বাজারে আনাজ বিক্রি, নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন ফেরি পারাপার করে বহু মানুষ। বুদবুদের রণডিহায় দামোদর পেরিয়ে যাতায়াত করেন বাঁকুড়া ও বর্ধমানের অনেক বাসিন্দাই। কিন্তু, নির্দিষ্ট কোনও ফেরিঘাটই নেই সেখানে। ফলে, নৌকা চড়তে নিত্য সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা।
বাঁকুড়ার সোনামুখীর রাধামোহনপুর, ফকিরডাঙা, বনগ্রাম, বন্দলহাঁটির মতো নানা গ্রাম থেকে প্রতিদিন ভোরে দামোদর পেরিয়ে বহু মানুষ বুদবুদ, পানাগড়ে আসেন। আনাজ, মাছ, দুধ বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ীরা। আবার বুদবুদের দিক থেকেও অনেকে বিভিন্ন কাজে নদীপথেই যাতায়াত করেন। বুদবুদের শালডাঙার বাসিন্দা বলরাম পাল সোনামুখীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি জানান, পানাগড় থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ হয়ে সোনামুখী যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। পেরোতে হয় প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ। রণডিহা হয়ে দামোদর পেরিয়ে সোনামুখী পৌঁছতে আধ ঘণ্টাও সময় লাগে না। তাই এই নদীপথ আরও সুগম করা হলে সুবিধে হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
রণডিহার বাসিন্দারা দাবি করেন, এই ঘাট দিয়ে দিনে হাজার দুয়েক মানুষ যাতায়াত করেন। একটি নৌকা সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পারাপার করে। চাকতেঁতুল গ্রামের বাসিন্দা মলয়কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রণডিহার পাড়ে নির্দিষ্ট কোনও ফেরিঘাট নেই। পাড়ে একটি উঁচু জায়গা থেকে মানুষ নৌকায় চাপেন। অনেক মোটরবাইক, সাইকেলও ওঠে নৌকায়। কোনও ভাবে নৌকা বেসামাল হলেই বিপদ। এখানে একটি স্থায়ী ফেরিঘাট খুব দরকার।’’
রণডিহায় দামোদরের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, এখন জল অনেকটাই কম। লকগেটে দিয়েই জল পেরোচ্ছে। জল কম থাকায় নৌকাও বেশি দূর যাচ্ছে না। লকগেটের নীচের অংশ থেকে সামান্য এগিয়েই নৌকা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে অনেকেই হেঁটে বা সাইকেলে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন। নৌকার মাঝি বংশী বাগদি, কালী ঘোষেরা জানান, বর্ষায় দু’কূল ছাপিয়ে জল যায়। সেই সময় রণডিহার দিকে নৌকা দাঁড় করাতে সমস্যায় পড়তে হয়। নির্দিষ্ট ফেরিঘাট থাকলে সেই সমস্যা হতো না।
ফেরিঘাট না থাকায় কোনও পণ্য নৌকায় চাপাতেও সমস্যা পড়তে হয় যাত্রীদের। ফেরিঘাটের সঙ্গে একটি প্রতীক্ষালয়ও প্রয়োজন বলে যাত্রীদের দাবি। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, প্রশাসনের তরফে রণডিহায় একটি ইকো পার্ক তৈরির পরিকল্পনা চলছে। ফেরিঘাট তৈরি হলে পর্যটনের আকর্ষণ আরও বাড়বে বলে তাঁদের মত। কয়েক মাস আগে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসনের তরফে এই ইকো পার্ক ও ফেরিঘাট তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। জেলা ভাগের পরে এখন রণডিহা চলে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের অধীনে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের আশ্বাস, ফেরিঘাটের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।