এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে তিন মাস ধরে। নিজস্ব চিত্র
‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পের তালিকায় নাম দেখে খুব নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন শ্যামলী তালুক। নিজের বাড়ি হবে ওই ভরসায় ধার-দেনা করে ২৫ হাজার টাকা জোগাড় পুরসভার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পুরসভাও প্রথম কিস্তির ৩০ হাজার টাকা দেয়। বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করে দেন তাঁরা। কিন্তু পরের কিস্তির টাকা না আসায় মাঝপথেই থমকে গিয়েছে কাজ। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে শীতের রাতে ত্রিপলের নীচেই থাকতে হচ্ছে শ্যামলীদেবীকে।
শ্যামলীদেবীদের মত গুসকরা পুরসভার কয়েক’শো পরিবার হাল এমনই। তাঁদের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলেনি। আটকে রয়েছে ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ। গুসকরা শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানপাড়ার বাসিন্দা শ্যমলীদেবী বলেন, ‘‘আমার স্বামীর নাম বাড়ি পাওয়ার তালিকায় আছে। পুরসভা ও নিজেদের জমা করা প্রথম কিস্তির ৫৫ হাজার টাকায় ঘর তৈরি শুরুও করেছি। কিন্তু বাকি টাকা না আসায় ছাদ দিতে পারিনি। বাধ্য হয়ে তিন মাস ধরে ত্রিপলের নীচেই রাত কাটাতে হচ্ছে।’’
একই অভিযোগ তালিকায় নাম থাকা কমল মাল, প্রশান্ত গড়াইদেরও। তাঁদের দাবি, বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরি করার জন্য টাকা দেওয়ার কথা পুরসভার। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর, পুরপ্রধানকে বারবার জানানো হলেও তাঁরা বলছেন, তাঁরা এখন পুরসভার কেউ নন। দফতরে গেলেও নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না।’’
গুসকরা পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পে হাজার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাড়ি পিছু খরচ ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। সবাই প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার জন্য নিয়ম মত বাড়ির একটা ভাগ তৈরি শেষও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু টাকা আসতে দেরি হওয়ায় প্রায় তিন মাস কাজ আটকে রয়েছে।
পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উপভোক্তারা প্রত্যেকেই গরিব। শীতের রাতে ত্রিপলের নীচে থাকা মুশকিলের। টাকার বিষয়টি পুর প্রশাসকেরা দেখুন।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৮ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা পুরসভার খাতে এসেছে। প্রত্যেক উপভোক্তাকে দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৭২ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের দাবি, “প্রশাসকের সই হয়ে গেলেই দু’এক দিনের মধ্যে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা জমা পড়ে যাবে।’’