কেরলে আটকে কাটোয়া, আউশগ্রামের বহু

জল নেই, ত্রাণ শিবিরে গাদাগাদি

কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের রাজুয়া মাঠপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে রাজীব। মাস দেড়েক হল কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছে বছর চব্বিশের ওই যুবক। সোমবার ফোনে জানান, জল বাড়তেই পালাগড় জেলার পাটান্দি এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া ও আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

ফোনের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের ত্রান শিবিরে গাদাগাদি করে থাকা। এক বেলা খাবার পেলে, অন্য বেলায় খালি পেটেই থাকতে হচ্ছে। কেরলের ভয়াবহ বন্যায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত এমনই পরিস্থিতিতে আটকে রয়েছেন কাটোয়ার রাজুয়ার তরুণ রাজীব শেখ। একই অবস্থা গাঁফুলিয়া, নতুনগ্রাম, মঙ্গলকোটের নতুনহাট-সহ কাটোয়ার একাধিক গ্রাম থেকে কেরলে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের।

Advertisement

কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের রাজুয়া মাঠপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে রাজীব। মাস দেড়েক হল কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছে বছর চব্বিশের ওই যুবক। সোমবার ফোনে জানান, জল বাড়তেই পালাগড় জেলার পাটান্দি এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘‘মাথার উপর ছাদটুকুই আছে। কোনওদিন চিঁড়ে তো কোনওদিন দুটো ভাত জুটছে। পানীয় জলও পর্যাপ্ত নেই। একটি ঘরেই গাদাগাদি করে ৫০ জন মাথা গুঁজে রয়েছি।’’ তাঁর সঙ্গে ওই ঘরে কাটোয়ার নতুনগ্রাম, পানুহাটেরও বেশ কয়েকজন যুবক রয়েছেন বলে জানান তিনি। এ দিন মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে চিন্তিত রাজীবের মা মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘তিন দিন পরে ছেলেকে ফোনে পেলাম। বাড়ি আসতে বলেছি। কিন্তু ছেলে বলছে টাকা নেই।’’

দিন তিনেক আগে কার্নাকুলাম থেকে ফিরেছেন ওই গ্রামেরই বাদল শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘দশ বছর ধরে কেরালায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এমন বন্যা আগে দেখিনি। বৃষ্টি বাড়ছে দেখে আগেভাগেই ফিরে এসেছি। বিধায়ককেও উদ্ধারের আর্জি জানিয়েছি।’’

Advertisement

নতুনগ্রামের প্রৌঢ় হাফেজ আলি শেখের তিন ছেলেই কালিকটে থাকেন। ফোনে বড় ছেলে দিলবাহার জানান, ‘‘সোমবার দুপুর থেকে বৃষ্টি একটু কমেছে। খাবারের দাম খুব বেশি। ছোট ভাইকে চেন্নাই থেকে ট্রেন ধরিয়ে দেওয়ার পরে ফিরব।’’ ছেলের গলার আওয়াজ শুনে নিশ্চিন্ত মা অনিয়া বিবি। তিনি বলেন, ‘‘ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরলে হয়। আর বাইরে যেতে দেব না।’’

মহকুমাশাসক সৌমেন পাল বলেন, ‘‘এখনও উদ্ধারের আবেদন আসেনি। বিডিওরা পঞ্চায়েত স্তরে খোঁজ নিয়ে দেখছেন কোন পরিবারের কত জন ফিরতে পারেননি।’’

কেরলে আটকে পড়েছেন আউশগ্রামের আদিবাসী যুবক আনন্দ মুর্মুও। তিনিও মাস তিনেক আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান। বিল্বগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাপিদিঘি গ্রামের তামড় মুর্মু এ দিন ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন আউশগ্রাম ১ বিডিও-র কাছে। আনন্দের স্ত্রী সুমিতা জানান, কয়েকদিন আগে ফোনে বলেছিল বৃষ্টি হচ্ছে খুব। মজুরি পেলেই চার বছরের ছেলের কাছে ফিরে আসবে বলেছিল। তারপরে এক দিন ফোনে জানান, বন্যায় ঘরে আটকে গিয়েছেন। তারপর থেকে ফোনে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।

আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু জানান, “পরিবারের তরফে সাহায্যের আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন