এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
দুর্গাপুরে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ ছাড়া তরুণীর এক সহপাঠীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হবে। কলেজ ক্যাম্পাসের আশপাশে ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। শুরু হয়েছে নমুনা সংগ্রহের কাজও।
দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকায় একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ‘নির্যাতিতা’ তরুণী। তিনি ওড়িশার বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানে তিনি ‘নির্যাতনের’ শিকার হয়েছেন। কয়েক জন যুবক ক্যাম্পাসের বাইরে তরুণীকে হেনস্থা করেন প্রথমে। তার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ‘গণধর্ষণ’ করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে রাতেই তরুণীর সহপাঠীকে আটক করে পুলিশ। তাঁর বয়ানের সত্যাসত্য যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। গভীর রাতে আরও তিন জনকে আটক করা হয়েছে। পরে সকালে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সহপাঠী এখনও আটক। সূত্রের খবর, আরও কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বেসরকারি ওই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ শনিবার একটি বিবৃতি দেন। ঘটনার দিন তরুণীর গতিবিধি বর্ণনা করা হয় ওই বিবৃতিতে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়া। প্রথমে বেরিয়েছিলেন এক সহপাঠীর সঙ্গে। মাঝে এক বার একা ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছিলেন। কিছু ক্ষণ পর তিনি আবার বেরিয়ে যান। তার মিনিট চল্লিশেক পর আবার সহপাঠীর সঙ্গেই ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। এর পর নিজের হস্টেলের দিকে যান। হস্টেলে গিয়ে বন্ধুদের ঘটনার কথা জানালে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে কলেজ থেকে প্রথম বেরিয়েছিলেন নির্যাতিতা। ফিরে হস্টেলে যান রাত ৯টা ৩১ মিনিট নাগাদ।
অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। শনিবার ‘নির্যাতিতা’র সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। দোষীদের যাতে দ্রুত গ্রেফতার করা হয় এবং তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভাবে হয়, সেই দাবি জানিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর। স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’, যারা গত বছর আরজি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল।
শনিবার রাতে রাজ্য পুলিশের তরফে পৃথক একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, মহিলাদের উপর নির্যাতনে পুলিশ ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে থাকে। দোষীরা শাস্তি পাবেই। রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা ঘেরাও করে তারা। নেতৃত্বে ছিলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা আবার বলেন, ‘‘পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করেছে। নির্যাতিতা ওড়িশার। ওঁরা এ রাজ্যের পুুলিশের তদন্তে আস্থা রেখেছেন।’’
দুর্গাপুরে ওড়িশার ছাত্রীর ‘গণধর্ষণ’কাণ্ডে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।