রকমারি: কাঞ্চননগের এক বাড়িতে ভোগ। ফাইল চিত্র
কোথাও দশ রকম ভাজা। কোথাও মাছের ঝোল। কেউ কেউ দেন পাঁঠার মাংস। আবার খাওয়ার শেষে পান-মুখশুদ্ধিও থাকে। পুজোর চার দিন দেবীর ভোগে এমন রকমফের দেখা যায় বিভিন্ন পুজোয়।
বর্ধমান রাজাদের প্রতিষ্ঠিত সর্বমঙ্গলা বাড়ির ভোগে মাছের টক ও শাক ভাজা বাধ্যতামূলক। যা ছাড়া দেবীর ভোগ অসম্পূর্ণ থাকে। ওই পুজোর অন্যতম সেবাইত তাপস অধিকারী (গোপন) বলেন, “রাঢ়বঙ্গে মাছের টক খুবই জনপ্রিয় পদ। সে জন্যই দেবীকে নিয়ম করে মাছের টক দেওয়া হয়। মাগুর মাছ পেলে ভাল, না হলে অন্য মাছের টকই ভোগে রাখতে হবে।” বর্ধমান রাজ পরিবারের নিজস্ব পুজো হয় রাজবাটী লাগোয়া লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে। এক সময় ৫২ রকম পদের ভোগ দেওয়া হত। এখন সেই গৌরব নেই, জৌলুসও নেই। তার মধ্যেও অষ্টমী-নবমীতে দেবীর জন্য রাখা হয় রাবড়ি, পায়েস, দইবড়া।
মেমারির ডাকের সাজ বিষয়ী বাড়িতে ভোগ দেওয়ার আগে ডাবের জল দেওয়া হয়। খাওয়ার পরে দু’বেলাই থাকে এক গ্লাস দুধ। তার সঙ্গে এক গোছা পান, সুপারি, মৌরি, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, ধনেচাল। বাড়ির বধূ জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘এই বাড়ির এটাই রীতি। ঘরের মেয়েকে আরামে রাখার জন্য ডাবের জল-দুধ দেওয়া হয়। আর খাওয়ার পরে পান খাওয়া তো বনেদি বাড়ির মহিলাদের অভ্যাস!’’ ওই বাড়ির পাশেই আর একটি পুজোবাড়িতে দেবীর ভোগে দেওয়া হয় কাতলা মাঝের ঝোল।
আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে তিথি ধরে ভাজার সংখ্যা বাড়ে ভোগে। পরিবারের নবীন সদস্য উৎসব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সপ্তমীতে সাত রকম ভাজা দেওয়া হয়। ক্রমানুসারে বেড়ে দশমীতে দেবীর ভোগে তা দাঁড়ায় দশ রকমে।’’
বর্ধমানের কাঞ্চননগরের দাস পরিবারের পুজোয় গুড় থেকে তৈরি ‘দেলো চিনি’ দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোয় থাকে শরবত, ছানা-দই-মাখন, ক্ষীর, খেজুর-কাঠবাদাম। আবার ইদিলপুরের ঘোষবাড়িতে রাখা থাকে বড় কদমা। আউশগ্রাম-কাটোয়া-রায়নার বেশ কয়েকটি বাড়িতে দেবীর মুখের ‘অরুচি’ কাটাতে দেওয়া হয় পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া মাংসের ঝোল!
চার দিনের জন্য আসেন দেবী। তাঁর ভোগে ত্রুটি যাতে না থাকে, খেয়াল রাখেন সকলেই।