Farmer

জমি হারিয়ে সংসার চলে খেতমজুরিতে

প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙনের আশঙ্কায় থাকেন কালনা ও কাটোয়া মহকুমার নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। কী পরিস্থিতি, প্রশাসন কী ভাবছে— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। প্রতি বছরই বর্ষা এলে ভাঙনের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেন এই সব জায়গার বাসিন্দারা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

পাড় ভাঙছে নদী। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে নিজেদের জমি ছিল। এখন অন্যের জমিতে খেতমজুরি করে দিন চলে। এক সময়ে এলাকায় স্কুল ছিল। এখন পড়াশোনার জন্য ছেলেমেয়েকে পাঠাতে হয় পাশের এলাকার স্কুলে। পূর্বস্থলীতে ভাগীরথীর ধারে থাকা নানা গ্রামে এই রকম সমস্যায় ভোগা বাসিন্দার সংখ্যা কম নয়। বছরের পর বছর ধরে নদীর ভাঙনে ভেসে গিয়েছে চাষের জমি, স্কুলবাড়ি থেকে রাস্তা— অনেক সম্পদই। ভাঙন আটকানোর স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি কিছুই, অভিযোগ এলাকাবাসীর।

Advertisement

পূর্বস্থলী ২ ব্লকের দশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে ঝাউডাঙা, মেড়তলা, মাজিদা, পূর্বস্থলী, পিলা, নিমদহ এবং পাটুলি পঞ্চায়েত এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। এই সমস্ত এলাকার অনেক গ্রাম বহু বছর ধরেই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেককে ভিটেমাটি হারিয়ে চলে যেতে হয়েছে অন্যত্র। এক সময়ে যেখানে ফসল ফলত, সেই জমি এখন নদীগর্ভে। ওই সব জমির মালিকদের কেউ-কেউ খেতমজুরের কাজ করে সংসার চালান। নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, নদীসেচ প্রকল্প, রাস্তা-সহ অনেক কিছুই।

প্রতি বছরই বর্ষা এলে ভাঙনের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেন এই সব জায়গার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, এ বার ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ এবং তার পরবর্তী কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জল বাড়তে শুরু করে ভাগীরথীতে। তার পর থেকেই নানা জায়গায় পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে। যজ্ঞেশ্বরপুর, দামপাল, কুঠুরিয়া, সিঙেরবাগ, ঝাউডাঙা, পাটুলি, কমলনগর, ন’পাড়া, মাজিদা শ্মশানঘাট এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সবচেয়ে বেশি পাড় ভাঙতে শুরু করেছে ঝাউডাঙা, তামাঘাটা এবং মাজিদা এলাকায়। তামাঘাটার বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় ভাঙনের সমস্যা দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে প্রাথমিক স্কুলের ভবন-সহ অনেক ঘরবাড়ি। ভাঙনের জেরে গ্রামের লোকসংখ্যাও প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছে। ভাঙন রোধে বারবার নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কোনওটিই তেমন কার্যকর হয়ে ওঠেনি। তামাঘাটার বাসিন্দা ভব দেবনাথের কথায়, ‘‘আমাদের ভিটেমাটি নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে। গ্রাম পিছিয়ে এসেছে। এখন অন্যের জমিতে কাজ করতে হয়।’’

ভাগীরথীর এক দিকে পাটুলি ঘাট, অন্য দিকে রয়েছে ঝাউডাঙা এলাকা। নদীর পাড়ে রয়েছে ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের অধীনস্থ গ্রামগুলি। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস দত্ত বলেন, ‘‘এলাকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নদী ভাঙনের সমস্যা। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’ ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জিত সান্যাল জানান, পঞ্চায়েত এলাকার কোন কোন জায়গায় ভাঙনের সমস্যা রয়েছে, সে ব্যাপারে একটি রিপোর্ট পঞ্চায়েত সমিতিকে পাঠানো হয়েছে।

পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙন রোখার জন্য তামাঘাটার দু’টি জায়গা এবং যজ্ঞেশ্বরপুর এলাকায় বালির বস্তা দিয়ে আপাতত কাজ শুরু করা হয়েছে। আরও কয়েকটি জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন