সিটি সেন্টার এলাকার পেট্রোল পাম্পে তোলা নিজস্ব চিত্র।
অচল নোট আর খুচরো টাকার সমস্যা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্প ও টোল বুথগুলিতে পুরনো নোট নেওয়া হবে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে ‘উটকো ঝামেলা’ এড়াতে নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও মাথায় হেলমেট না থাকলেও মিলছে পেট্রোল। মোটরবাইক আরোহী থেকে পেট্রোল পাম্পের কর্মী সকলেরই এক রা, এখন ওসব নিয়ম মানতে গেলে সমস্যা আরও বাড়বে!
বেনাচিতির একটি পেট্রোল পাম্প। সকাল সকাল হেলমেট ছাড়াই কয়েক জন মোটরবাইক আরোহীকে তেল নিয়ে বের হতে দেখা গেল।তেল দিলেন কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাম্পের এক কর্মী বলেন, ‘‘খুচরো দিতে পারছি না। তার উপরে প্রায় সকলেই পুরনো ৫০০-হাজারের নোট দিচ্ছেন। এখন আর হেলমেট থাকা, না থাকার বিষয়টা দেখার ফুরসৎ নেই।’’
অথচ পথ-নিরাপত্তার হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হয় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি। পরে ঠিক হয়, মাথায় হেলমেট না থাকলে পেট্রোল পাম্পে মিলবে না তেল। বর্ধমান জেলায় এই নির্দেশিকা ২০১৫-র ফেব্রুয়ারি মাসে জারি হয়। তারপরে খানিক নড়চড়ে বসতে দেখা যায় দুর্গাপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পেট্রোল পাম্পগুলি। পেট্রোল পাম্পগুলিতে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোলে’র নির্দেশিকাও টাঙিয়ে দেয় তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু তারপরে ফের পুরনো ছবিই কেন? স্টেশন রোড লাগোয়া একটি পাম্পের কর্মী বলেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া তেল না দিলে বচসা বাধছে মোটরবাইক আরোহীদের সঙ্গে। এর সঙ্গে রয়েছে পুরনো নোট আর খুচরোর চক্কর। আবার নতুন করে কে সমস্যা ডেকে আনে।’’
যদিও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ‘মোটরযান আইন ১৯৮৮’-র ১২৯ ধারা অনুসারে, মোটরবাইক চালানোর সময়ে একমাত্র ‘শিখ’ সম্প্রদায় ছাড়া বাকি সকলের জন্য হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। ‘মোটর ভেহিক্যালস’ দফতর হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীকে ১৭৭ ধারায় ‘স্পট ফাইন’ করতে পারে। পুলিশ মোটরবাইক আরোহীকে আদালতে পাঠাতে পারে।
দুর্গাপুরের এ-জোনের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সরকার বিনা হেলমেট মাথায় না দিয়েও দিব্যি পেট্রোল পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘পুরনো নোট দিলে পাম্পের কর্মীরা খুচরো ফেরত দিতে চাইছেন না। কী ভাবে তেল মিলবে ভাবতে গিয়ে আর হেলমেট পরার কথা মাথায় থাকছে না!’’ খুচরো সমস্যার কথা বলেছেন দুর্গাপুরের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পের মালিকেরাও। তাঁদের দাবি, হাতে এখনও পর্যাপ্ত একশো বা পঞ্চাশ টাকার নোট নেই। তাই খুচরো-সমস্যা থেকে বাঁচতে নতুন কিছু পন্থা নিয়েছেন তাঁরা। কী রকম? যেমন, কোনও পাম্পে মোটরবাইক আরোহীদের পুরো টাকার তেল কিনতে বলা হচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে, ন্যূনতম ৩০০ টাকার তেল কিনতে হবে। আর এ সব ‘নতুন নিয়ম’ নিয়েই গোলমাল বাড়ছে বলে দাবি মোটরবাইক আরোহীদের। পেট্রোল পাম্প মালিকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়ম ডিলার্স’-এর বর্ধমান জোনের সম্পাদক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘খুচরো সমস্যা না মিটলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনও আশা নেই।’’
তা হলে পথ-নিরাপত্তার কী হবে? সকলেরই এক রা, ‘‘আপাতত আশঙ্কা নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’