কালীপুজোর পরেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছিল বাড়ির কুকুরটি। হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাড়ির লোকজন। শেষমেশ পোষ্যকে নিয়ে পশু চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন আসানসোলের বাসিন্দা। গত বছরের ঘটনা। পশু চিকিৎসক জানান, শব্দবাজির দাপটের কারণেই হাবভাবে এমন হয়েছে। কালী পুজো এলেই ফি বছরই তাই আতঙ্কে দিন গোনা শুরু হয় পোষ্য আর গবাদি পশুর মালিকদের।
রাজ্য প্রাণিস্বাস্থ্য বিভাগের জেলা ও মহকুমার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, প্রতি বছরই কালীপুজোর আগে ও পরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুদের নিয়ে মালিকেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। পশু চিকিৎসকদের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শব্দবাজির জন্যই এমন বিপত্তি ঘটে। রাজ্য প্রাণিস্বাস্থ্য দফতরের বর্ধমানের পশু পলিক্লিনিকের আধিকারিক জয়ন্ত ঘোষ জানান, বিকট শব্দবাজির দাপটে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে দিগভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে পশুরা। মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরতে থাকে। একেবারেই জল খেতে চায় না। হৃদযন্ত্রেও গোলমাল দেখা যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ ছাড়াও অস্বাভাবিক রক্তচাপ বেড়ে যায়। আবার অনেক সময়ে দেখা যায় পশুরা খাট বা টেবিলের তলায় লুকিয়ে রয়েছে। অনেক সময়ে হিংস্র আচরণও করে। শুধু তাই নয়, বিকট শব্দবাজির ফলে পশুদের প্রজনন ক্ষমতাও লোপ পাচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের।
কেন এমন আচরণ? পশু চিকিৎসকদের দাবি, গবাদি পশু সাধারণ ভাবে ৮৫ ডেসিবল পর্যন্ত আওয়াজ সহ্য করতে পারে। শব্দবাজি অনেক সময়েই এই মাত্রা ছাড়ানোয় গবাদি পশু ও পোষ্যেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানান জয়ন্তবাবু।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ বার শব্দবাজির দাপট শুরু হয়েছে দুর্গাপুজো থেকেই। রাজ্য প্রাণিস্বাস্থ্য দফতরের আসানসোলের আধিকারিক শুভাশিস পাল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই অনেকে বাড়ির পোষ্যদের আনতে শুরু করেছেন। দুর্গাপুজোতেও যথেচ্ছ বাজি ফেটেছে। কালীপুজো উপলক্ষে এখন থেকেই শহরে অল্পবিস্তর বাজি ফাটছে। অসুস্থ্ খরগোস, কুকুরের মতো পোষ্য ও গবাদি পশুর সংখ্যাটা দিন কয়েক পরে আরও বাড়বে।’’
এই বিপত্তি থেকে গবাদি পশুদের রক্ষার একমাত্র উপায়, শব্দবাজি না ফাটানো। কিন্তু শব্দবাজিতে লাগাম না টানা গেল? সে ক্ষেত্রে পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ, যে সব বাড়িতে গবাদি পশু রয়েছে, সেখানে যথাসম্ভব দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। পশুদের বেশি পরিমাণে তরল খাবার দিতে হবে। বাড়ির অন্তত এক জন সদস্যকে পোষ্যের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। দরকারে পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধও খাওয়ানো যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় পড়েছেন পশুপ্রেমীরা। আসানসোলের পশুপ্রেমী করবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘পোষ্যদের জন্য মালিকেরা তবুও তো খানিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু রাস্তার কুকুর বা অনাথ পশুদের অবস্থা আরও করুণ হয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, এই সময়ে কুকুরের লেজে বাজি বেঁধে বা বিড়ালের গায়ে রংমশাল ছুড়ে মজা পাচ্ছেন! এমন আচরণ বন্ধ করা দরকার।’’
এই প্রসঙ্গে বিধায়ক ও পশুপ্রেমী দেবশ্রী রায়ের আবেদন, ‘‘হাতজোড় করে বলছি, পৃথিবীতে মানুষ, পোষ্য, রাস্তার সারমেয় সকলেরই সুস্থ হয়ে বাঁচার অধিকার রয়েছে। উৎসবের দিনগুলিতে বাড়ির অসুস্থ মানুষদের পাশাপাশি প্রাণীদের কথা মাথায় রেখেই বাজি পোড়ানো উচিত।’’