ঝাড়ফুঁকে নির্যাতন, ধৃত ওঝা

পড়শিদের অভিযোগ, রাত থেকে চলে ‘ভূত তাড়ানোর’ নামে অত্যাচার। প্রথমে ঝাঁটা দিয়ে গোটা শরীরে মারা হয়। তার পরে আরতিদেবীর পাশে আগুন জ্বালিয়ে ধুনো দেওয়া হয়। সঙ্গে চলে লাঠি-রড দিয়ে মারধর। আরতিদেবীর অভিযোগ, “আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঝা়ড়ফুঁক করানোর নামে এক মহিলাকে মারধর ও ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগে এক ওঝা ও তার শাগরেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত ওঝা শ্যাম মুর্মুর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার মধুপুরে। তাঁর শাগরেদ বিশ্বজিৎ সরেন মেমারির সাতগেছিয়ার বাসিন্দা। শনিবার রাতে বাড়ি থেকেই তাদের ধরে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন জামালপুরের আঝাপুরের বধূ আরতি মুর্মু। তাঁর স্বামী কাজল মুর্মু চিকিৎসকের বদলে মধুপুর গ্রামের ওই ওঝার কাছে নিয়ে যান তাঁকে। ওঝা নিদান দেন, ‘আরতিকে ভূতে ধরেছে, সে কারণেই তিনি নানা রকম রোগে ভুগছেন।’ সঙ্গে রোগ সারানোর ক্ষমতা তার রয়ছে বলেও দাবি করেন। পেশায় দিনমজুর কাজলবাবু ওঝার পরামর্শ মেনে নেন। সেই মতো শুক্রবার শাগরেদ বিশ্বজিৎকে নিয়ে আঝাপুরের বাড়িতে হাজির হন শ্যাম। শুরু হয় আরতিদেবীকে মাটিতে শুইয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝাড়ফুঁক, মারধর।

পড়শিদের অভিযোগ, রাত থেকে চলে ‘ভূত তাড়ানোর’ নামে অত্যাচার। প্রথমে ঝাঁটা দিয়ে গোটা শরীরে মারা হয়। তার পরে আরতিদেবীর পাশে আগুন জ্বালিয়ে ধুনো দেওয়া হয়। সঙ্গে চলে লাঠি-রড দিয়ে মারধর। আরতিদেবীর অভিযোগ, “আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।” পড়শিরা বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি, আরতি তখন প্রায় বেঁহুশ!’’ পড়শিরাই ঝা়ড়ফুঁক বন্ধ করিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁকে। পরিস্থিতি আঁচ করে পাঁচিল টপকে পালান ওই ওঝা ও তাঁর শাগরেদ।

Advertisement

শনিবার বিকেলে আরতিদেবীর শ্বশুর সীতারাম মুর্মু জামালপুর থানায় ওই দু’জনের বিরুদ্ধে মারধর, মারাত্মক ভাবে জখম করার অভিযোগ দায়ের করেন। ধৃতদের রবিবার বর্ধমান সিজেএম এজলাসে তোলা হলে বিচারক চার দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন।

অন্ধবিশ্বাসের খেসারত এই ভাবে স্ত্রীকে দিতে হয়েছে দেখে এখন চোখ খুলেছে কাজলবাবুর। তিনি বলছেন, “ওই ওঝার ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেছি। এ রকম ভাবে নির্যাতন করবে বুঝতেই পারিনি। ওঝা নয়, আমাদের উচিত ছিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।” বিচারকের এজলাসে অভিযুক্ত ওঝাও বলে ওঠেন, “খেত মজুরের কাজ করি। মাঝে মধ্যে গাঁ-গঞ্জে ওঝাগিরি করি। চরম শিক্ষা হয়েছে। আর কোনও দিন করব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন