পাচার ধরে এক দিনেই ১৫ লক্ষ

কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের নতুন নিয়মে গত শুক্রবার থেকে নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। যে কোনও রাস্তা থেকে ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত বালি মজুত করার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০২:০৪
Share:

হানা: অভিযানে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

এক বেলা হানা দিয়েই সরকারের ঘরে ঢুকল প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের নতুন নিয়মে গত শুক্রবার থেকে নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। যে কোনও রাস্তা থেকে ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত বালি মজুত করার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আদৌ এই নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে কি না তা দেখতে সোমবার সকালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর বর্ধমানের সদরঘাট থেকে মেমারির পালসিট টোল প্লাজা পর্যন্ত এলাকায় অভিযান চালান জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং পরিবহণ দফতরের কর্তারা। দুপুর পর্যন্ত একের পর এক অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি, বেআইনি ভাবে মজুত করা বালি ধরেন তাঁরা। হানা দেন বালি খাদানেও।

জেলাশাসক বলেন, “জেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৩৫টি অতিরিক্ত বালিবোঝাই গাড়ি আটক করেছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর মার্চ পর্যন্ত জেলায় বালিঘাট নিলামের গতি তেমন ছিল না। সেচ দফতর বা ভূমি দফতরের কাছেও জেলায় বালিঘাটের প্রকৃত সংখ্যা ছিল না। ফলে ১৭৪টি বালির ঘাট নিলামে তোলা হয়েছিল। তার মধ্যে ১০৬টি ঘাট থেকে নিলাম বাবদ সরকারের ঘরে ঢুকেছিল মাত্র ৪০ কোটি টাকা। অজয়-দামোদর-দ্বারকেশ্বর-মুণ্ডেশ্বরী নদী দিয়ে ঘেরা পূর্ব বর্ধমানের থেকে নিলামের গতিতে অনেকটাই এগিয়ে ছিল বীরভূম-বাঁকুড়ার মতো ছোট জেলা। নবান্নের কর্তারাও সে সময় বর্ধমানের উপর খুশি ছিলেন না, বলে জানান জেলার এক আধিকারিক। এরপরেই এ বছরে ২৪১ নতুন বালিঘাট নিলামে তোলার জন্য বেছে নেয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত নিলামে উঠেছে ২২১টি বালিঘাট। জেলাশাসকের দাবি, “নিলাম বাবদ জেলা প্রশাসন ১৫০ কোটি টাকা আয় করেছে। আর রয়্যালটি বাবদ পাওয়া গিয়েছে ৪০ কোটি টাকা।’’

Advertisement

এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) প্রণব বিশ্বাস, আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মহম্মদ আবরার আলমের নেতৃত্বে ভোর ৫টা থেকে অভিযান শুরু হয়। প্রথমেই তাঁরা যান সদর ঘাটে। সেখান থেকে বাঁকুড়া মোড় হয়ে ৬টা নাগাদ তেলিপুকুর মোড়ে চলে আসেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। সেখান থেকে তাঁরা যান জামালপুরের চাঁচাই ও মেমারির পাল্লা রোডে। প্রণববাবু বলেন, “ওই দুটি জায়গাতেই বেআইনি ভাবে বালি মজুত করা হচ্ছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আমাদের বারবার রাস্তা খারাপ হচ্ছে বলে চিঠি দিয়েছেন। আমরাও নানা ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরেও বালি মজুত বন্ধ হচ্ছে না দেখে যৌথ ভাবে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

সেচ দফতর জানিয়েছে, ১৫ জুন থেকে নদীর উপর কোনও অস্থায়ী সেতু থাকবে না বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আগামী তিন মাস পর্যন্ত নদীতে সেতু বানিয়ে বালি উত্তোলনও বন্ধ করার জন্য নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার ভাস্করসূর্য মণ্ডল বলেন, “বালিঘাটের ইজারাদাররা ওই সেতু তৈরির জন্য বছরে চার লক্ষ টাকা ‘সিকিউরিটি মানি’ বাবদ সেচ দফতরের কাছে জমা রাখেন। ওই সেতু না খুললে সরকার ওই টাকা জরিমানা বাবদ নিয়ে নেবে।’’ জানা গিয়েছে, গলসির শিল্লাঘাট থেকে জামালপুর পর্যন্ত ২৭টি কাঠের সেতু রয়েছে। ওই সেতুগুলি খুলতে শুরু করেছেন ইজারাদারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন