প্রতীকী ছবি।
সাইবার প্রতারণা রুখতে নাগরিক সচেতনতায় জোর দিচ্ছে পুলিশ, ব্যাঙ্ক। কিন্তু অনলাইনে কেনাকাটা-সহ নানা ভাবে প্রতারণার ‘পথ’ বার করছে প্রতারকেরা। এই পরিস্থিতিতে সাইবার-প্রতারণা থেকে বাঁচার নির্দিষ্ট কোনও উপায় বলতে না পারলেও নাগরিকদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা।
কী কী সেই পরামর্শ, কী ভাবেই বা হচ্ছে প্রতারণা? সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার-প্রতারণার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে গ্রাহকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটা করছে প্রতারকেরা। এ ক্ষেত্রে কার্ডের কোনও তথ্যই অপরিচিত কাউকে জানানো যাবে না বলে পরামর্শ পুলিশকর্তাদের। কারণ, তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, নামী ওয়েবসাইটগুলি ছাড়াও এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে কেনাকাটা করতে গেলে কার্ড নম্বর, মেয়াদ শেষের তারিখ ও ‘সিভিভি’ নম্বর দিলেই চলে। ‘পিন’ বা ‘ওটিপি’ ছাড়া সেই সব সাইটে কেনকাটা করা যায়। তাই, কার্ডের তথ্য জানা থাকলেই যে কেউ কার্ডটি ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারে। ফলে এই ধরনের অপেক্ষাকৃত ‘অপরিচিত’ সাইটগুলি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশকর্তারা।
অধিকাংশ মোবাইল বা কম্পিউটারেই ‘অ্যান্টি-ভাইরাস’ সফটওয়্যার থাকে না। ফলে হ্যাকারেরা সহজেই ওই সমস্ত বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলি থেকে তথ্য হাতাতে পারে। অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য উন্নত ‘অ্যান্টিভাইরাস’ থাকা জরুরি কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে। এর আরও একটি সুবিধার দিক, এই ধরনের সফটওয়্যার সন্দেহজনক ওয়েবসাইটকে চিহ্নিত করতে পারে।
অনেক অপরিচিত ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যে ভাল ‘ছাড়ে’র কথা বলে কার্ডের গ্রাহকদের প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু এমন অপরিচিত ওয়েবসাইটগুলি সাইবার-নিরাপত্তার স্বার্থে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
কোনও ওয়েবসাইট দেখার সময়ে বা অনলাইনে কেনাকাটা করার সময়ে বহু রকম লিঙ্ক আসে। সাইবার ক্রাইম বিষয়ে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এই সব লিঙ্কের মাধ্যমে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয় হ্যাকারেরা। অনেকেই কম্পিউটারে কার্ডের নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, কার্ডের পিন নম্বর ‘সেভ’ করে রাখেন। এই ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে সেই সব তথ্য বেহাত হতে পারে। তাই এ ধরনের লিঙ্কে ‘ক্লিক’ না করাই ভাল।
সাইবার-প্রতারণার একটি পরিচিত পদ্ধতি, কার্ড ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’ অর্থাৎ কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করা। পুলিশকর্তারা জানান, দোকান, শপিং মল, রেস্তরাঁয় কার্ড ‘সোয়াইপ’ করলে তা ঠিক যন্ত্রে করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কড়া নজর রাখা দরকার। কারণ, কার্ডের তথ্য হাতানোর জন্য দুষ্কৃতীরা সোয়াইপ মেশিনের মতো হুবহু দেখতে ‘কার্ড কপিয়ার’ নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করে। সেই যন্ত্রে কার্ড একবার ঘষলেই কার্ডের যাবতীয় তথ্য চলে যাবে প্রতারকদের কাছে। আর তা থেকেই তৈরি হবে কার্ড ক্লোন।
সাধারণ ভাবে এ সবই ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে জালিয়াতির পদ্ধতি। কিন্তু, সম্প্রতি দুর্গাপুরেই ইএমআই কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগও এসেছে। তদন্তকারীরা জানান, এমন ঘটনায় সাধারণত, প্রথমে কোনও ভাবে কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে ওই কার্ডের সঙ্গে যুক্ত গ্রাহকের মোবাইল নম্বর বদলে অন্য নম্বর যোগ করে দুষ্কৃতীরা। ফলে কেনাকাটার সময় গ্রাহকের কাছে ‘ওটিপি’ বা ‘মেসেজ’, কিছুই যায় না। গ্রাহকের ঠিকানা বদলে পণ্য পাঠানোর জন্য আলাদা ঠিকানা দেওয়া হয়। বৈধ গ্রাহকের কার্ড ব্যবহার করেই কেনাকাটা হয়েছে দেখে ঋণদানকারী সংস্থারও সন্দেহ হয় না। গ্রাহকের কাছে ঋণের কিস্তির মেসেজ পাঠিয়ে দেয় তারা। মাথায় হাত পড়ে গ্রাহকের।
প্রতারকদের খপ্পর থেকে বাঁচাতে পুলিশ ও ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে লাগাতার সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়াস চলছে। তা সত্ত্বেও পর পর প্রতারণা ঘটছে। তবে এই ধরনের প্রতারণার কিনারা একেবারেই হয় না, এমনটা নয়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, সম্প্রতি বামুনাড়ায় প্রতারিত হন এক ব্যবসায়ী। ওই প্রতারণার ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে। ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরতও আসছে।
তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যাঙ্কে গিয়ে কার্ড বন্ধ করে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।
(শেষ)