সন্দেহ পুলিশের

ছেলের সঙ্গে বিবাদেই কি বাবাকে খুন

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহতের বড় ছেলে মহম্মদ ইমতিয়াজ বার্নপুর ইস্কোর ঠিকাদার। নানা রকম কাজের সূত্রে ইমতিয়াজের সঙ্গে এলাকার অন্য নানা গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক শত্রুতাও রয়েছে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

বার্নপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৬
Share:

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই এলাকাতেই হয়েছিল খুন। ছবি: পাপন চৌধুরী

এলাকায় নিপাট ভালমানুষ, নির্বিবাদী বলেই পরিচিতি ছিল তাঁর। মঙ্গলবার ভরসন্ধ্যায় বার্নপুরের হুসেননগরের বাসিন্দা সৈয়দ ফরিদ আলমের (৬৫) গুলিতে খুন হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, এর সঙ্গে নিহতের ছেলের ব্যবসায়িক কোনও শত্রুতার যোগ থাকতে পারে। খুনের ২৪ ঘণ্টা পরে বুধবারও ঘটনাস্থল, রিভারসাইড রোডের একাংশ ও হুসেননগর থমথমে ছিল।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিহতের বড় ছেলে মহম্মদ ইমতিয়াজ বার্নপুর ইস্কোর ঠিকাদার। নানা রকম কাজের সূত্রে ইমতিয়াজের সঙ্গে এলাকার অন্য নানা গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক শত্রুতাও রয়েছে। পুলিশ জেনেছে, সেই শত্রুতা থেকে কোনও বিপদ এড়াতে ইমতিয়াজ বিশেষ প্রকাশ্যেও আসেন না। কিন্তু ছেলেকে ‘শিক্ষা’ দিতেই সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত ফরিদ আলমকে ‘টার্গেট’ করা হয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

রীতিমতো পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছিলেন সৈয়দ ফরিদ আলম। বার্নপুরের ১০ নম্বর গেট ও ভারতী ভবনের মাঝে নেতাজি মূর্তি থেকে ১০ মিটার পিছনে রিভারসাইড রোড ধরে হাঁটছিলেন তিনি। সেই সময়ে আচমকা একটি সাদা গাড়ি এসে তাঁর পথ আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির পিছনে থাকা একটি মোটরবাইক এগিয়ে আসে। তাতে সওয়ার দুই আরোহী একেবারে কাছ থেকে ফরিদ আলমের কানের তলায় দু’টি ও পেটে একটি গুলি চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। তাঁকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে চম্পট দেয় গাড়ি ও মোটরবাইক। আগেভাগে ফরিদ আলমের গতিবিধির পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর না থাকলে এ ভাবে খুন করা যেত না বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।

Advertisement

পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, নিহতের বড় ছেলে ব্যবসায়ী হিসেবে উত্থানের পথে বেশ কিছু ‘শত্রু’ও তৈরি করে ফেলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের নানা থানায় এক সময়ে বিভিন্ন অভিযোগও দায়ের হয়েছিল ইমতিয়াজের নামে। যদিও সম্প্রতি কয়েক বছরে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানায় পুলিশ। কিন্তু তদন্তকারীদের ধারণা, পুরনো শত্রুতা পিছু ছাড়েনি। পুলিশ জেনেছে, অতীতে ইমতিয়াজদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক জনকেও খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা।

কিন্তু ছেলের সঙ্গে শত্রুতার জেরে বাবাকে খুন করা হবে কেন? স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, বাসিন্দাদের বিপদে-আপদে পাশে থাকা-সহ এলাকায় নানা সামাজিক কাজে ফরিদ আলম ভূমিকা নিতেন। পুলিশের অনুমান, বাবার এই জনসংযোগে ইমতিয়াজ লাভবান হচ্ছেন— শত্রুদের হয়তো এমনটা ধারণা হচ্ছিল।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও এলাকা থমথমে। ঘনঘন পুলিশের টহলদার গাড়ি দেখা গিয়েছে। কিন্তু হদিস মেলেনি দুষ্কৃতীদের। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘সব দিক খোলা রেখেই তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’’ তিনি জানান, ঘটনাস্থল লাগোয়া সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। বিকেলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই ইস্কো হাসপাতালে সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রানিগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক সোহরাব আলি। তাঁরাও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।

এই ঘটনায় ফরিদ আলমের পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি ইমতিয়াজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন