(বাঁ দিকে) মুহাম্মদ ইউনূস। নিহত নেতা ওসমান হাদি (ডান দিকে)। খোদাবক্সের ইস্তফার সরকারি ঘোষণাপত্র (ইনসেটে) গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাংলাদেশের নিহত যুবনেতা ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেফতারির তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়ে শনিবারই ইউনূস সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল হাদির দল ইনকিলাব মঞ্চ। সেই আবহেই এ বার পদত্যাগ করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক) খোদাবক্স চৌধুরী। বুধবার রাতে সে দেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। খোদাবক্সের ইস্তফাপত্র গ্রহণও করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
বুধবার রাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খবরটি জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী তথা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন। ২০২৪ সালে জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার গড়া হয়, তখন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিন জনকে বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন ইউনূস। এই তিন বিশেষ সহকারীকে যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রকের উপদেষ্টাদের সহযোগিতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন পুলিশের প্রাক্তন আইজি খোদাবক্স। যথাক্রমে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অধ্যাপক সায়েদুর রহমান এবং অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম। আমিনুল কয়েক মাস আগেই পদত্যাগ করেন। এখন পদত্যাগ করলেন খোদাবক্সও।
ঘটনাচক্রে, হাদির মৃত্যুর পর ছ’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তবে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি হাদির খুনিদের। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়ে ইউনূস সরকারকে শনিবারই ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চ। সময়সীমার মধ্যে সদুত্তর দিতে না পারলে ইউনূস সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক) খোদাবক্সের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের তরফে আবদুল্লা আল জাবের বলেছিলেন, ‘’২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জনসমক্ষে এসে বলতে হবে, গত এক সপ্তাহে তদন্ত কত দূর এগিয়েছে। এর জবাব না দিতে পারলে তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে।’’ সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও হাদির হত্যাকারীদের বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি সে দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলি। সেই আবহে সোমবার দুপুরে নিহত নেতার দলের তরফে ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা সমর্থন করবে, না কি সরকার ফেলে দিতে আন্দোলন শুরু করবে— তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে ‘খুনের সব দায় নিয়ে’ পদত্যাগ করতে হবে ইউনূসের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং আইন উপদেষ্টাকে। এই হুঙ্কারের কিছু ক্ষণ পরেই ইউনূস সরকার ঘোষণা করে, বাংলাদেশের ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইবুনালে হাদি হত্যার বিচার হবে। এ বার পদত্যাগ করলেন বিশেষ সহকারীও।