একা শহরে

ব্যবস্থা আছে, জানা নেই অনেকেরই

কারও ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে। কারও স্বামী অথবা স্ত্রী মারা গিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপুরে উদ্ধার হয়েছে এমনই কয়েক জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দেহ। এমনকী, মৃত্যুর পরে দেহও পড়ে থেকেছে কিছু দিন। কেন এই পরিস্থিতি, কী ভাবছেন শহরের প্রবীণেরা, প্রশাসনের ভূমিকা কী, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।২০১৮ সালের মার্চে শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে ও সাহস জোগাতে ‘প্রণাম’ প্রকল্প চালু করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। বয়স্ক মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অন্য কোনও বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

শহরে একা থাকা প্রবীণদের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা যে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, তা নয় বলে দাবি প্রশাসনের। মাঝে-মধ্যেই নানা ধরনের কর্মসূচি চোখে পড়ে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের অনেকেরই।

Advertisement

২০১৮ সালের মার্চে শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে ও সাহস জোগাতে ‘প্রণাম’ প্রকল্প চালু করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। বয়স্ক মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অন্য কোনও বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। পুলিশের তরফে একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়। সেখানে ফোন করে সাহায্য চাইলে নিকটবর্তী থানার তরফে সমস্যার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়। সমাধানের ব্যাপারেও সহায়তা করা হয়।

শহরে ভবঘুরে ও আশ্রয়হীনদের মাথা গোঁজার আধুনিক আস্তানা গড়ে ওঠে ২০১৭ সালে। বিধাননগরের ভ্যাম্বে কলোনির কাছে ‘অভয়াশ্রম’ নামে চার তলা ভবন তৈরি হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচে। সেখানে ৬০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিছানাপত্র, খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসার দায়িত্ব পুরসভার। শুধু ভবঘুরে নয়, একাকী বিপাকে পড়া প্রবীণদেরও সেখানে থাকার ব্যবস্থা হয় বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

পুরসভা ও পুলিশ অসুস্থ প্রবীণ নাগরিকের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমন ছবি বিরল নয় দুর্গাপুরে। গত বছর জানুয়ারিতে এমএএমসি টাউনশিপের সুকান্তপল্লির ভাড়া বাড়ি থেকে অসুস্থ এক বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। সুস্থ হলে তাঁকে অভয়াশ্রমে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালেই মারা যান ওই বৃদ্ধা। আবার নভেম্বরে ডেপুটি মেয়রের কাছে খবর পেয়ে ডিএসপি টাউনশিপের জয়দেব অ্যাভিনিউয়ের কোয়ার্টার থেকে গুরুতর অসুস্থ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে পুলিশ।

ব্যবস্থা হয়তো রয়েছে। কিন্তু যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের কাছে সেই ব্যবস্থার সব তথ্য ঠিক ভাবে পৌঁছচ্ছে না, অভিযোগ শহরের প্রবীণদের একাংশের। কবিগুরু এলাকার ভবানন্দ বসুর কথায়, ‘‘পুলিশের প্রকল্পের কথা শুনেছি। কিন্তু দরকার পড়লে কী ভাবে যোগাযোগ হবে জানি না।’’ ননকোম্পানি এলাকার তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জোরদার প্রচার জরুরি, যাতে সবাই পরিষেবার কথা জানতে পারেন। তবেই প্রকল্প চালুর উদ্দেশ্য সফল হবে।’’

ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতাদেবী জানান, রাতে ভবঘুরে ও আশ্রয়হীনদের খুঁজে রাস্তা থেকে তুলে এনে অভয়াশ্রমে ঠাঁই দেওয়ায় উদ্যোগী হয়ে থাকেন তাঁরা। বিপদে পড়া প্রবীণ নাগরিকদেরও থাকার ব্যবস্থা করা যায় সেখানে। তিনি বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে অক্ষম কাউকে রাখার সমস্যা রয়েছে। কারণ, সব সময় সাহায্য করার মতো কেউ নেই। তবে হাঁটাচলা করতে পারেন, এমন যে কোনও প্রবীণের থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’’ তাঁর দাবি, প্রবীণদের কেউ বিপাকে পড়েছেন খবর পেলেই সাহায্য করা হয়।

পুলিশ জানায়, প্রণাম প্রকল্প জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ চলছে। সম্প্রতি নিউ টাউনশিপ থানার উদ্যোগে ‘প্রণাম’ প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পদযাত্রার আয়োজন হয়। অনেক বয়স্ক মানুষজন তাতে যোগ দেন। উৎসাহ জোগাতে তাঁদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারীকে পুরস্কারও দেওয়া হয়। ছিলেন মেয়র দিলীপ অগস্তিও। পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘বয়স্ক নাগরিকদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রকল্প চালু করা হয়েছে। কোনও প্রবীণ যেন নিজেকে একা মনে না করেন, তা নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন