বন্ধুর বিয়ে রুখে দিল দুই ‘কন্যাশ্রী’

প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে গাড়িতে ফেরার পথে নবম শ্রেণির ছাত্রী সুপর্ণা ও বিজয়া অরূপবাবুকে বলে, ‘‘কাকু চলুন, আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণির আরও এক ছাত্রীর আজই বিয়ে। সেটাও রুখতে হবে।’’

Advertisement

সুচন্দ্রা দে ও শেখ নিজাম আলম

কাটোয়া ও গলসি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ১২:০০
Share:

সুপর্ণা ঘোষ ও বিজয়া দত্ত নামে দুই কন্যাশ্রীর মুখে এমন কথা শুনে তাদের ‘নাবালিকা’ বন্ধুর বিয়ে রুখল প্রশাসনের কর্তারা।

চলুন, আরও এক বন্ধুর বিয়ে রুখতে হবে। সুপর্ণা ঘোষ ও বিজয়া দত্ত নামে দুই কন্যাশ্রীর মুখে এমন কথা শুনে তাদের ‘নাবালিকা’ বন্ধুর বিয়ে রুখল প্রশাসনের কর্তারা। শুক্রবার মঙ্গলকোটের মাঝিখাঁড়া গ্রামের ঘটনা। শুধু তাই নয়, শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের নানা প্রান্তে মোট ছ’জন নাবালিকার বিয়ে রুখছে প্রশাসন।

Advertisement

‘এখনই বিয়ে করতে চাই না, বিয়ে বন্ধ করে দিন’— বুধবার মঙ্গলকোটের মাঝিখাঁড়া গ্রামের এক ছাত্রীর এমনই ফোন পেয়েছিলেন ‘চাইল্ড লাইনে’র কর্তারা। তার পরে শুক্রবার স্থানীয় পালিগ্রাম ডিএস হাইস্কুলের কন্যাশ্রী সুপর্ণা ও বিজয়াকে নিয়ে ছাত্রীর বাড়ি পৌঁছন প্রশাসনের কর্তারা। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী ‘১০৯৮’, চাইল্ড লাইনের এই নম্বরটা সংগ্রহ করেছিল সুপর্ণা ঘোষ, বিজয়ার কাছ থেকেই। যুগ্ম বিডিও নির্মল বিশ্বাস ও চাইল্ডলাইনের কাটোয়া শাখার কর্মকর্তা অরূপ সাহা জানান, ছাত্রীর পরিবারের তরফে ১৮ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এর পরে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে গাড়িতে ফেরার পথে নবম শ্রেণির ছাত্রী সুপর্ণা ও বিজয়া অরূপবাবুকে বলে, ‘‘কাকু চলুন, আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণির আরও এক ছাত্রীর আজই বিয়ে। সেটাও রুখতে হবে।’’ এর পরে ওই গ্রামেই নবম শ্রেণির ছাত্রীটির বাড়িতে প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে যায় সুপর্ণ ও বিজয়া। সেখানে ‘পাত্রী’কে উদ্দেশ্য করে ওই দুই ছাত্রী বলে, ‘‘আমরা কন্যাশ্রীর টাকায় পড়ছি, তুইও পড়বি।’’ এখানেও বিয়ে ভেঙে দিতে রাজি হয় পরিবারটি। ওই দুই কন্যাশ্রীর ভূমিকা নিয়ে অরূপবাবু বলেন, ‘‘এমন ভাল কাজ অন্য আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।’’

Advertisement

এ ছাড়া শ্রীবাটির বাসিন্দা, কাটোয়ার সিঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে রোখেন ব্লক সমাজ কল্যাণ আধিকারিক সুদর্শন মজুমদার ও চাইল্ড লাইনের তরফে ভিক্টর চক্রবর্তী।

রামগোপাল হাইস্কুলের এক ছাত্রীর বিয়ের তোড়জোড় চলছিল গলসির বামুনাড়া গ্রামেও। সেখানেও চাইল্ড লাইন, গলসি ১ ব্লক অফিসে ও গলসি থানার কর্তারা ছাত্রীর বাড়ি যান। মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেবেন, এই মর্মে মুচলেকা দেয় ছাত্রীর পরিবার।

বর্ধমানের ভিটা গ্রামেও এক নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড় চলছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। বিকেলে বিডিও (বর্ধমান ১) দেবদুলাল বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ভিটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পরিবারের তরফে মুচলেকা দেওয়া হয়। তবে পরিবারের তরফে বিয়ের তোড়জোড়ের কথা অস্বীকার করা হয়। যদিও কয়েক জন পড়শির দাবি, রবিবার ছিল বিয়ের দিন। এ দিনই স্থানীয় দেবনগরে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে রুখে দেন বিডিও (পূর্বস্থলী ২)। বর্ধমান ও পূর্বস্থলী, দু’জায়গাতেই প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় স্কুলের ছাত্ররা।

(সহ প্রতিবেদন: সৌমেন দত্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন