SIR related Death Allegation

লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাব না? এসআইআর আতঙ্কে গায়ে আগুন দাদা-বৌদির সংসারে আশ্রিতা অনূঢ়ার! তুঙ্গে তরজা

২০ বছর আগে বাবা-মা মারা গিয়েছেন। দিদি ও বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দাদার পরিবারে থাকতেন অবিবাহিতা। লক্ষ্মীর ভান্ডারে পাওয়া অর্থ দিয়ে দাদার সংসারে কিছু সাহায্য করতেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৮
Share:

রাতে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে গায়ে আগুন দেন ভাতারের যুবতী। —প্রতীকী চিত্র।

ভোটার তালিকায় নাম না উঠলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাবেন না। এই আতঙ্কেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী এক যুবতী। এমনই দাবি পরিবারের। শনিবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে।

Advertisement

ভাতার থানার ভূমশোর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব মুস্তারা খাতুন কাজি। শুক্রবার রাতে বাড়িতেই দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন মৃত্যু হয়েছে মুস্তারার। এখন পরিবারের দাবি, এসআইআরের আতঙ্কে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন ওই অবিবাহিতা।

মৃতার বৌদি সাবিরা খাতুন বলেন, ‘‘এসআইআরের ফর্ম (এনুমারেশন) জমা দেওয়ার পর থেকেই প্রবল দুশ্চিন্তায় ভুগছিল মুস্তারা। ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না, লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে, এ সব নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। কী ওকে বুঝিয়েছে জানি না। কিন্তু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল।’’ দিদি আস্তুরা খাতুনেরই বক্তব্য তা-ই। তিনি বলেন, “বিএলও ফর্ম (গণনাপত্র) দিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বোন চিন্তায় ছিল। মনে করেছিল, সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ভয়ে গায়ে আগুন দিয়েছে।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় মুস্তারার নাম ছিল চল্লিশোর্ধ্ব ওই মহিলার। ২০ বছর আগে তাঁর বাবা আজিজুল হক কাজি এবং মা কাসেরা মারা গিয়েছেন। দিদি এবং বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক দাদা সিরাজুল হক কাজির পরিবারে থাকতেন অবিবাহিতা মুস্তারা। সরকারি প্রকল্পে পাওয়া অর্থ দিয়ে দাদার সংসারে কিছু সাহায্য করতে পারতেন। কিন্তু পাড়ায় কারও কারও মুখে তিনি শোনেন ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেই ওই সুবিধা আর পাবেন না।

যুবতীর মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিবাদ। মুস্তারার মৃত্যুতে সরাসরি নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এসআইআরের মাধ্যমে জনমানসে আতঙ্ক তৈরি করে ভোটের মুনাফা নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি।’’ ওই মৃত্যুর প্রতিবাদে ভাতারের বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধায়ক জানিয়েছেন, রবিবার ভূমশোর গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘‘কমিশনের কাছে জানতে চাই, আর কত প্রাণ যাবে? ২ বছরের কাজ ২ মাসের মধ্যে শেষ করতে গিয়ে প্রায় ৪৫ জন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আর কত রক্ত গেলে বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন এটা বন্ধ করবে?’’ পাল্টা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রথম থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে। তারাই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিএলওদের ভয় দেখাচ্ছে। মৃতের পরিবারগুলোকে ভয় দেখাচ্ছে। এসআইআর ঠিক ভাবে হলে আসলে তৃণমূলের সর্বনাশ হবে। সেই ভয়ে অপপ্রচার করছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে যুবতীর দেহ বর্ধমান মেডিকেল কলেজের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement