হাইকোর্টের রায়ের চার বছর পরে পুকুর সংস্কার

উচ্চ আদালতের রায়কে অগ্রাহ্য করে দিনের পর দিন পুকুর ভরাট চলছিল। বছর চারেক আগে পুকুর ভরাট বন্ধ করে মৎস্য দফতরকে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপরেও সংস্কারহীন অবস্থাতেই পড়েছিল পুকুরটি। ফের দখলের অভিযোগ ওঠায় অবশেষে কাটোয়ার ওই পুকুরটি সংস্কারে হাত দিল জেলা মৎস্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৮
Share:

পুকুর থেরে মাটি তোলার কাজ শুরু। নিজস্ব চিত্র।

উচ্চ আদালতের রায়কে অগ্রাহ্য করে দিনের পর দিন পুকুর ভরাট চলছিল। বছর চারেক আগে পুকুর ভরাট বন্ধ করে মৎস্য দফতরকে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপরেও সংস্কারহীন অবস্থাতেই পড়েছিল পুকুরটি। ফের দখলের অভিযোগ ওঠায় অবশেষে কাটোয়ার ওই পুকুরটি সংস্কারে হাত দিল জেলা মৎস্য দফতর।

Advertisement

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস ময়দানে রুদ্র মার্কেটের উত্তর দিকে ঘোষহাট মৌজার ৪৫ শতকের ওই পুকুরটি ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত ১৯৯৩ সালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সময় তেরো জন মালিক মিলে পুকুরটির একাংশ ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন। পুকুরটি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রথমে পুরপ্রধান, পরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, এমনকী পরিবেশমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হন এলাকাবাসী। সুরাহা না মেলায় ২০০১ সালে এপিডিআরের শরনাপন্ন হন তাঁরা। স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হওয়ায় কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ থাকে। ওই বছরই জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা পুকুরটির ভরাট করা অংশ খনন করে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন পুকুরমালিকদের। কিন্তু তারপরও পুকুর ভরাট থামেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এরপরেই পুকুরটি দেখভালের ভার নেয় মৎস্য দফতর।

কিন্তু পুকুর আগের অবস্থায় না ফেরায় ২০১০ সালে এপিডিআরের তরফে হাইকোর্টে মামলা দায়ের কর হয়। ততদিনে প্রায় ২৮ একর জায়গা বুজিয়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেন এপিডিআর-এর কাটোয়া শাখার সম্পাদক সুব্রতকুমার চৌধুরী। বছর তিনেক মামলা চলার পরে ২০১৩ সালের ৫ জুলাই বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ তিন মাসের ভেতরে পুকুরের এলাকা পরিষ্কার করে সেটি সংস্কারের নির্দেশ দেয় জেলা মৎস্য দফতরকে। পরের বছর পাল্টা পুকুরটি দখলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন পুকুর মালিকরা। তবে সেই আবেদন খারিজ করে পুরোনো রায়ই বহাল রাখে হাইকোর্ট। ইতিমধ্যেই মাস পাঁচেক আগে এপিডিআরের তরফে ফের মহকুমাশাসকের কাছে পুকুরটি সংস্কারের আর্জি জানানো হয়। পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সমরেন্দ্রনাথ কোলে পুকুরের মালিক জগদীশ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু এতদিনেও পুকুর সংস্কারে মৎস্য দফতরের সাড়া মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই চার বছরে সিমেন্ট, বালি ফেলে দিনের পর দিন পুকুর ভরাট চলেছে। কিন্তু সংস্কার শুরু হয়নি।

Advertisement

জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা দেবাশিস পাড়ুইয়ের যদিও দাবি, পুকুর খননের জন্য বরাদ্দ অর্থ পাওয়া যায়নি এতদিন। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি জানান, কাটোয়া পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের কাছে টাকার দরবার করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু জানানো হয়েছিল টাকা নেই। শেষমেশ মৎস্য দফতর গত নভেম্বরে ১৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬০ টাকা অনুমোদন করে। এরপরে দরপত্র ডাকার কাজ শুরু হয়। মাপজোক হয়। সোমবার থেকে জেসিবি মেশিন দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ দিনই আবার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ওই পুকুরের আরও কয়েকজন মালিক অজিতকুমার পোদ্দার, রীনা পোদ্দার, মনোতষ সাহারা (পুকুরের দাগ নং ১০৬/৩০৯ ও ডাঙার দাগ নং ১০৬/৩২০) জগদীশ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে খাসপুকুরে বসত বাড়ি ও বাতাসা কারখানা তৈরির অভিযোগ করেন। তবে জগদীশবাবুর দাবি, ‘‘যেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছি সেটি ডাঙা। নথিও রয়েছে।’’ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ওই জায়গা পুনরায় মাপার নির্দেশ দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন