মাঠেই পড়ে জলদি আলু, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা বর্ধমানে

এক বস্তা অর্থাৎ ৫০ কেজি জলদি আলুর দর মাত্র ৮০ টাকা! তবে সেই দরেও আলু কেনার জন্য দেখা নেই ফড়েদের। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করা, বোরো চাষ নিয়ে আশঙ্কায় চাষিরা। চাষিদের দাবি, লোকসান সামাল দিতে সহায়ক মূল্যে আলু কিনুক সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫২
Share:

মাঠেই পড়ে আলু। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এক বস্তা অর্থাৎ ৫০ কেজি জলদি আলুর দর মাত্র ৮০ টাকা! তবে সেই দরেও আলু কেনার জন্য দেখা নেই ফড়েদের। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করা, বোরো চাষ নিয়ে আশঙ্কায় চাষিরা। চাষিদের দাবি, লোকসান সামাল দিতে সহায়ক মূল্যে আলু কিনুক সরকার।

Advertisement

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পোখরাজ আলু (জলদি আলু) উঠতে শুরু করে। আউশগ্রামের চাষিরা জানান, চাষের খরচ কেজি প্রতি আলুতে ৪ টাকা ২০ পয়সা। সেখানে আলুর দর মিলছে কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা ৬০ পয়সার মতো। চাষিরা জানান, প্রতি মরসুমে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আলু উঠে যাওয়ার পরে বোরো চাষের জমি তৈরি শুরু হয়। কিন্তু এ বার দর না মেলায় আলু তোলার কাজই শেষ করতে পারেননি অনেকে। গোপালপুর কলোনির চাষি ভরত ঢালি বলেন, ‘‘আমি ১২ বিঘা জমিতে জলদি আলু চাষ করেছি। শুধুমাত্র কুড়ুল মৌজায় প্রায় দেড় হাজার চাষি ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে আলুর চাষ করেন। কী ভাবে টাকা শোধ হবে, জানি না।’’

কিন্তু কেন এমন অবস্থা? জানা গিয়েছে, নির্দষ্ট সময়ের পরেও জেলার বহু হিমঘরে আলু মজুত ছিল। কিন্তু আলুর দর অত্যন্ত কমে যাওয়ায় বহু চাষি তা নিতে আসেননি। ফলে সেই সব আলু নিলামে চড়ায় হিমঘরগুলিকে। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে আনন্দ সাঁতরা বলেন, ‘‘বাজারে পুরনো আলু রয়েছে। তাই জলদি আলুর তেমন চাহিদা নেই। তা ছাড়া জলদি আলুর ফলনও বেশ ভাল হয়েছে।’’ জমি থেকে আলু ওঠার পরে এই সময়ে হিমঘর না খোলায় চাষিরা তা ফড়েদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিন্তু চাহিদা ও দর, দুইই না থাকায় এ বার সেই ফড়েদেরও দেখা নেই।

Advertisement

জেলার মধ্যে আউশগ্রামের কুড়ুল, মালিয়ারা, গোপালপুর, হরিনাথপুর, ছোরা মৌজায় প্রতি বার ২৫ হাজার বিঘার বেশি জমিতে এই চাষ করা হয়। আলু চাষ হয় পূর্বস্থলী ২, মেমারি, জামালপুর-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকেও। চাষিরা জানান, আলু চাষের জন্য পঞ্জাবের বীজ কিনতে হয়েছে। কিসান ক্রেডিট কার্ড ও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গড়ে ঋণ নিতে হয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে। ভুলু বণিক, আশুতোষ বিশ্বাস, বিষ্ণু হিরাদের মতো চাষিদের দাবি, লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কিনুক অথবা ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করুক ব্যাঙ্ক। নোট-বাতিলের পরে জেলায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে বিস্তর টালবাহানা হয়। গোলাতেই ধান পড়ে থাকতে দেখা যায় বহু চাষির। এই পরিস্থিতিতে ফের আলু চাষেও লোকসান দেখে মাথায় হাত পড়েছে চাষির। জেলার এক সহ কৃষি অধিকারিক পার্থ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্যার কথা চাষিরা লিখিত ভাবে জানাননি। জানালে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন