বিড়ি বেঁধে, তাঁত বুনে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন

সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে এতটুকুও পিছু হটেনি দুই কন্যা। বরং পরিশ্রম আর জেদের কাছে হার মেনেছে সাফল্য। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০১:৫১
Share:

বৈশাখী ও নিতু। —নিজস্ব চিত্র।

জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকু মিটিয়ে বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ তাঁদের কাছে। তবে সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে এতটুকুও পিছু হটেনি দুই কন্যা। বরং পরিশ্রম আর জেদের কাছে হার মেনেছে সাফল্য।

Advertisement

বাড়িতে একটি মাত্র তাঁত বোনার যন্ত্র। তাতে তাঁত বুনেই কোনও রকমে দিন গুজরান হয় কাটোয়ার মুস্থুলির মণ্ডল পরিবারের। অনটনের বাধা পেরিয়েই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৪৫০ নম্বর পেয়েছেন ওই পরিবারের বৈশাখী মণ্ডল। ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। বৈশাখীর বাবা সুফলবাবু বলেন, ‘‘তাঁত বুনে মহাজনের কাছে দিয়ে সংসার চলে। সারা বছর কাজও থাকে না। মেয়েকে কলেজে পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই।’’ বৈশাখী জানান, বাংলা নিয়ে পড়ে শিক্ষিকা হতে চান তিনি। কিন্তু কী করে মেয়ের স্বপন সফল হবে সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে বাবা-মায়ের।

দীননাথ দাস হাই স্কলের ছাত্রী নিতু মিস্ত্রির বাবা-মা দু’জনেই বিড়ি শ্রমিক। দিনে মেরেকেটে রোজগার দুশো টাকা। তাঁদ‌ের কাজে হাত লাগান মেয়েও। তারপরেও এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪১৫ নম্বর পেয়েছেন তিনি। নিতুর বাড়ি বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরে। মাটির দুটি ঘর, টালির চাল। বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে নিতু জানান, সংস্কৃত নিয়ে পড়তে চান তিনি। তারপরে শিক্ষিকা হয়ে বাবা-মাকে একটু আরাম দিতে চান। নিতুর বাবা মিন্টুবাবু ও মা সরস্বতীদেবী জানান, যত কষ্টই হোক মেয়ে যতদূর পড়তে চায় পড়াবো। নিতু বলেন, ‘‘স্কুলের মাস্টারমশাইরা খুব সাহায্য করেছেন। তাঁরা বলেছেন, পড়া ছেড়ো না, আমরা আছি।’’

Advertisement

কাঞ্চননগর দীননাথ দাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষ দত্ত জানান, নিতু বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনী সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যোগ দেন। ২০১৫ সালে বিজ্ঞান মডেলে জেলা স্তরে প্রথমও হন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন