নোট অচলে কপালে ভাঁজ বৃদ্ধাশ্রমেও

বহির্বিশ্বে যা ঘটে চলেছে সে সবের খুব বেশি কিছুর প্রভাব তাঁদের উপরে পড়ে না। কিন্তু নোটের ধাক্কা লেগেছে তাঁদের গায়েও। পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলে কপালে ভাঁজ পড়েছে বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদেরও।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০১
Share:

দুর্গাপুরের এক বৃদ্ধাশ্রমে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বহির্বিশ্বে যা ঘটে চলেছে সে সবের খুব বেশি কিছুর প্রভাব তাঁদের উপরে পড়ে না। কিন্তু নোটের ধাক্কা লেগেছে তাঁদের গায়েও। পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলে কপালে ভাঁজ পড়েছে বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদেরও।

Advertisement

সন্ধে থেকে তাঁদের বেশির ভাগই বসে পড়েন টিভির সামনে। ৮ নভেম্বর রাতে সে রকমই টিভিতে নোট বাতিলের খবর দেখেন। গোড়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন, বিশেষ সমস্যা হবে না। কারও কাছেই প্রচুর পরিমাণে নগদ পাঁচশো-হাজার নেই, তাই অনায়াসেই ব্যাঙ্ক থেকে পাল্টে নেওয়া যাবে। কিন্তু পরের ক’দিনে পরিস্থিতি যে দিকে এগিয়েছে, রাতে ঘুম কমেছে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের।

দুর্গাপুরের এ-জোনের নেতাজি সুভাষ রোডের বৃদ্ধাশ্রমে জনা ২৫ বাসিন্দা রয়েছেন। এটি পরিচালনা করে ‘বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ফর হিউম্যান অ্যাক্টিভিটিস’ নামে একটি সংস্থা। এখানকার আবাসিক দিলীপ মুখোপাধ্যায় চোখে দেখতে পান না। সঙ্গে থাকেন স্ত্রী বিজলীদেবীও। তিনি জানান, প্রথমে মনে হয়েছিল অথৈ জলে পড়েছেন। একা কী ভাবে দু’জনের সমস্যা মেটাবেন ভেবে পাননি। বিজলীদেবী বলেন, ‘‘খবরে দেখছি, ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। কী ভাবে টাকা বদল করব, ভেবে পাইনি।’’

Advertisement

একই পরিস্থিতিতে পড়েন অঞ্জলি ভড়, বাণী গুহরায়েরা। আবাসিকদের কারও কাছে ৩ হাজার, কারও কাছে ৫ হাজার টাকা ছিল। প্রায় সবই পাঁচশো বা হাজারের নোটে। তাঁরা বলেন, ‘‘হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত শুনে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছি।’’ তাঁরা জানান, বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ারটেকার অশোক চৌধুরী সাহায্য করছেন। ধাপে-ধাপে অনেকের নোট বদলে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। অশোকবাবু বলেন, ‘‘আবাসিকদের ছেলেমেয়েরা এসে খোঁজখবর নেন ঠিকই। তবু আমি সব সময় চেষ্টা করি পাশে থাকতে।’’ আর এক আবাসিক মিনতি নন্দী নিজেই গিয়েছিলেন শহরের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। সেখানকার ম্যানেজার তাঁকে প্রবীণদের জন্য নির্দিষ্ট লাইনে দাঁড় করিয়ে তাড়াতাড়ি নোট বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তবে এখনও কিছু পুরনো নোট রয়ে গিয়েছে আবাসিকদের অনেকের হাতে। বাকিরা চিন্তিত, খুচরো শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

শহরের বি-জোনের আইনস্টাইন অ্যাভিনিউয়ে ‘বিবেকানন্দ ভাব সমাজ সোসাইটি’র উদ্যোগে ২০০৫ থেকে একটি বৃদ্ধাবাস চলছে। সেখানকার আবাসিক মলয় ভট্টাচার্য, সুভাষ সরকার, দীপক দত্ত, রেখা চৌধুরী, অর্চনা রায়েরা জানান, বৃদ্ধাশ্রমের মাসিক খরচ মেটানোর পরেও দৈনন্দিন প্রয়োজনে হাতে কিছু টাকা সব সময় রাখতেই হয়। পাঁচশো বা হাজারের নোট বাতিল হওয়ার খবরে প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অনেকের ছেলেমেয়ে বাইরে থাকে। কেউ আবার নিঃসন্তান। কী ভাবে সামাল দেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’’

এখানেও মুশকিল আসান হয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তা দীপালি সান্যাল, বাবলু সান্যালেরা। আবাসিকদের তাঁরা বোঝান, দিন কয়েক কেটে গেলে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় কমবে। আপাতত পরিস্থিতি বুঝে কিছু নোট বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। দীপালিদেবী বলেন, ‘‘মোবাইল এটিএম শহরের বহু জায়গায় ঘুরছে। আমাদের এখানে এত জন বয়স্ক বাসিন্দা রয়েছেন। কিন্তু এখানে আসেনি। এলে অনেক সুবিধা হতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন