চাপে মুকেশ, থানায় নালিশ অধ্যক্ষের

জেলাশাসক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য—বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় গিয়ে মেমারি কলেজের শিক্ষাকর্মী তথা ছাত্রনেতা মুকেশ শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:০০
Share:

মুকেশ শর্মা। নিজস্ব চিত্র

জেলাশাসক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য—বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় গিয়ে মেমারি কলেজের শিক্ষাকর্মী তথা ছাত্রনেতা মুকেশ শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী। এফআইআরে নাম রয়েছে কলেজের আংশিক সময়ের এক শিক্ষকেরও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে মেমারি কলেজের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ অনুরোধ করেছিলেন জেলা তৃণমূলের নেতা উত্তম সেনগুপ্ত। তার আগে কলেজের অধ্যক্ষও সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে মুকেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি বিষয়টি জেনেছি। কী করা যায় দেখছি।’’ শুক্রবার মেমারির বিধায়ক নার্গিস বেগমের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকেরা দেখা করেন। তাঁদের পাশে প্রশাসন রয়েছে, এই বলে বিধায়ক তাঁদের আশ্বস্ত করেন।

মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে শুক্রবার কলেজে আসেননি মুকেশ। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি, বেআইনি জমায়েত ও চুরির অভিযোগে মামলা রুজু করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ এ দিন দুপুরে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, মিশ্রপাঠের অংশ হিসেবে কলেজে বাংলার অন্তবর্তীকালীন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম বর্ষের প্রায় ১২০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৭৫০ জন পড়ুয়া পরীক্ষায় হাজির ছিলেন। ওই পড়ুয়াগের বড় অংশই জানান, কলেজের ভিতরে শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার তাঁরা পছন্দ করছেন না। তাঁরা চান, কলেজে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে পাঠ্যক্রম শেষ করে অন্তবর্তীকালীন পরীক্ষা সময়মতো শেষ করা হোক।

Advertisement

কলেজ সূত্রের খবর, মিশ্র পাঠ্যক্রমের নিয়ম অনুযায়ী কলেজে কোও পড়ুয়ার ৭৫ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক। ওই উপস্থিতির উপরে নম্বর যোগ হবে, তেমনই পরীক্ষায় বসারও অনুমোদন মিলবে। কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এক অনার্সের ছাত্রী মাত্র ৬ দিন ক্লাস করেছেন। তাঁর উপস্থিতির হার বাড়ানোর দাবি জানান শিক্ষাকর্মী মুকেশ। সেই দাবি মানা ‘অসম্ভব’ বলার পর থেকেই অধ্যক্ষকে হেনস্থা করা শুরু হয়। অভিযোগ, সোম ও মঙ্গলবার মুকেশের নির্দেশেই কিছু পড়ুয়ারা ঘেরাও করে রাখে অধ্যক্ষ-সহ শিক্ষকদের। ঘেরাওয়ে কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, এক শিক্ষিকার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বছর খানেক আগে মুকেশের ‘দাপটে’ মেমারি কলেজের পরিচালন সমিতির বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিনিধি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বলেও অভিযোগ। ওই কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ফারুক আবদুল্লার দাবি, ‘‘মুকেশ সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় নানা অভিযোগে ওর নাম জড়িয়েছিল। এখন কলেজের শিক্ষাকর্মী হয়েও ভর্তি-সংক্রান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেই চলেছে।’’

এত দিন মুকেশের পাশে থাকলেও দলীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে নিন্দা করায় কিছুটা চাপে পড়ে সুর বদল করেছেন ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্য। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মুকেশকে সংযত আচরণ করতে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের কেউ অপমান করবে, তা আমরা মানব না। প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেছে। আশা করছি, কলেজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।’’ মুকেশের দাবি, তিনি চক্রান্তের শিকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন