শহরের মানুষজনের মধ্যে প্রশ্ন উঠতেই বাণিজ্যিক ভবন ভেঙে বহুজাতিক ভবন তৈরির কাজ আটকে দিল বর্ধমান পুরসভা। এমনকী, ওই ভবনের নকশা তৈরি নিয়ে ভুল রিপোর্ট পেশ করায় এক সুপারভাইজার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে চলেছে পুরসভা। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “ওই বাণিজ্যিক ভবনের বিষয়টি নজরে আসতেই আমি বৃহস্পতিবার সমস্ত নথিপত্র দেখতে চাই। খুঁটিয়ে সেই সব নথি দেখতে গিয়ে নকশায় গলদ চোখে পড়ে। তখনই ওই নকশা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু তাই নয় বাড়ির একটি ইঁটও খুলতে পারবে না ওই সংস্থা, তেমনই নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বর্ধমান শহরের জিটি রোডের ধারে ঢলদিঘির পাড়ে একটি বাণিজ্যিক ভবন ভেঙে বহুজাতিক ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই বাণিজ্যিক ভবনের ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তখনই বহুজাতিক ভবন তৈরির অনুমোদন পুরসভা কী করে দিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এমনকী, ওই ভবনের পিছনে থাকা ঢলদিঘি বুজিয়ে কাজ চলার অভিযোগও ওঠে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল ও পুরপ্রধান ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দিঘিটিকে পূর্বের অবস্থায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্দেশ মেনে দিঘিটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া দূরের কথা, ওই সংস্থা নিজের মত করেই কাজ করে গিয়েছেন।
ওই বাড়ির এক ব্যবসায়ী শেখ হালিম বলেন, “খবরটা পেয়ে ভালই লাগল। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণের পরেও বৃহস্পতিবার বাড়ি ভাঙার কাজ করে গিয়েছে ওই সংস্থা। তাতে না আঁচানো পর্যন্ত আমাদের চিন্তা দূর হবে কী?” যদিও ওই সংস্থার কর্তারা বারেবারে দাবি করেন, পুরসভার অনুমোদন নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। তাহলে হঠাৎ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হল কেন? পুরসভার ব্যাখা, পুরসভাসমূহের অধিকর্তা দফতর থেকে অনুমোদন নিয়ে এসে ওই সংস্থা পুরসভায় নকশা দিয়ে আবেদন করে। পুরসভার এক বাস্তুকার সরেজমিন দেখে রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট দেখেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পুরপ্রধান বলে ন, “ওই নকশাতে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন, এমন কোনও উল্লেখ নেই বা আমাদের কাছে কোনও লিখিত ভাবে জানায়নি। সুপারভাইজারও ভাড়াটিয়াদের কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেননি। বরং নকশা অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেন। আবেদনকারীরা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, ভুল তথ্য দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে পুরসভা। সেই মত ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।