মিছিল, পাল্টা মিছিলে তেতে রইল শহর

অভিযুক্ত পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা থেকে উপাচার্যের ইস্তফা— বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার পরে নানা দাবিতে দিনভর সরব হল এসএফআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৮
Share:

পুলিশের লাঠি চালানো নিয়ে সরব এসএফআই নেতারা। নিজস্ব চিত্র।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা থেকে উপাচার্যের ইস্তফা— বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার পরে নানা দাবিতে দিনভর সরব হল এসএফআই। বুধবার বর্ধমান শহরে মিছিল, প্রশাসনের কর্তাদের স্মারকলিপি দেয় তারা। এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগে পাল্টা কর্মসূচি নেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। তবে সব পক্ষেরই যা দাবি ছিল, স্নাতক স্তরের পার্ট ৩-এর পরীক্ষা পিছনোর জন্য পড়ুয়াদের সেই আর্জি শেষমেশ এ দিন মেনে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এ দিন বর্ধমানে এসে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্পাদক বিক্রম সিংহ দাবি করেন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ চাই এবং এসডিপিও-র বিরুদ্ধে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দাবি না মিটলে কয়েকটা দিন দেখার পরে বর্ধমানের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় স্তরেও আন্দোলন শুরু করা হবে।” উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার অবশ্য এ দিনও বলেন, ‘‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা পুলিশে অভিযোগ করেছি।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা পুলিশে অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার এসএফআইয়ের ব্যানার নিয়ে বহিরাগত লোকজন এসে ভাঙচুর চালিয়েছে।

সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের শ’দেড়েক পড়ুয়া প্রায় বারো ঘণ্টা পরীক্ষা পিছোনোর দাবিতে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক সুজিত চৌধুরীকে ঘেরাও করে রাখে। অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক-সহ চার জনকে হেনস্থাও করা হয়। সেই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডেকে পরীক্ষা পিছনো নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর পরেই মঙ্গলবার ফল বিভ্রাট ও নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এসএফআইয়ের স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী চত্বরে। পাঁচিল টপকে, গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে এসএফআই কর্মী-সমর্থকরা। উপাচার্য ভবনের দোতলায় যাওয়ার রাস্তায় কোলাপসিবল গেট ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। পড়ুয়াদের উপরে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

Advertisement

বুধবার সকাল ১০টা থেকে অনেক পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে পরীক্ষার সূচি নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যে এক দল পড়ুয়া বিকেল ৩টে নাগাদ উপাচার্যের সঙ্গে দেখাও করেন। তাঁদের মধ্যে বিবেকানন্দ কলেজের সন্তোষ দে দাবি করেন, “পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে এ দিন কোনও আলোচনা হচ্ছে না বলে উপাচার্য জানিয়েছেন। উল্টে তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষা যাতে না পিছোয় সে জন্য অনেক পরীক্ষার্থী ই-মেল করেছেন।” এ দিনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রতিনিধি দল উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয়। শেষমেশ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা বলেন, “১৮ মার্চ থেকে পরীক্ষার সূচি দেওয়া হয়েছিল। সেই পরীক্ষা ১০ দিন পিছিয়ে ২৮ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে। বিস্তারিত সূচি ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টিএমসিপি-র প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে পরীক্ষা পিছোনোর দাবি তোলেন। তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সূচি নির্ধারণ কমিটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, পরীক্ষা পিছনো যেতে পারে। কিন্তু কত দিন পিছনো যাবে, সে সিদ্ধান্তের ভার উপাচার্যের উপরেই ছেড়ে দেয় কমিটি। সন্ধ্যায় উপাচার্য ফের রেজিস্ট্রার, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক, ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে এ দিন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্পাদক বিক্রম সিংহ ও রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেনরায় শহরের বেসরকারি হাসপাতালে আসেন। এসএফআইয়ের দাবি, ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বুধবার আট জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় এসডিপিও (বর্ধমান সদর) সৌমিক সেনগুপ্তের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে এসএফআই। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে স্মারকলিপি দিয়ে এসডিপিও-র বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন নেতা-নেত্রীরা। বর্ধমান স্টেশন থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত এ দিন মিছিলও করে এসএফআই। মধুজার অভিযোগ, “আমাদের আন্দোলন স্তব্ধ করতে এসডিপিও পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে রায়নার শ্যামসুন্দরে রেশন আন্দোলনের সময়ে বামকর্মীদের দিকে তৃণমূলের বোমাবাজির সময়েও ওই এসডিপিও চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনুল হকের নেতৃত্বে একটি দলও এর আগে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে এসডিপিও-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসডিপিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পিছনোর সিদ্ধান্ত জানার পরে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “অনেক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এই দাবিতে আন্দোলন করছে। এসএফআইয়ের গুন্ডামির বিরুদ্ধে বুধবার আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম। তার ফল পেলেন ছাত্রছাত্রীরা।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র পাল্টা বক্তব্য, “বর্ধমানের মহিলা কলেজ থেকে মানকর কলেজ, কোথাও ফর্ম পূরণ করতে পারছে না পড়ুয়ারা। চার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁরা। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন