ঘরে তালা ঝুলিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন। ফিরে এসে দেখলেন, তালা ভাঙা, লণ্ডভণ্ড আলমারি। খোয়া গিয়েছে দামি জিনিসপত্র। বাড়িতে থেকেও যে রেহাই মিলবে, সে নিশ্চয়তা নেই। সকালে ঘুম ভেঙে দেখা গেল, গেটের তালা ভেঙে উধাও মোটরবাইক। শুধু তাই নয়, বাড়ির লোকজনের হাত-পা বেঁধে চলল অবাধে লুঠপাটও।
আসানসোল শহর ও আশপাশের এলাকায় এখন এই ধরনের ডাকাতি-ছিনতাই হয়ে উঠেছে নিত্য ঘটনা। পুলিশি তৎপরতার দাবিতে সাধারণ মানুষ থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহরের শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বিশেষ পাল্টায়নি। যদিও পুলিশের দাবি, কিছু ঘটনার কিনারা হয়েছে, দুষ্কৃতীরা ধরাও পড়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিনারা অধরা বলে পাল্টা দাবি শহরবাসীর।
পুলিশ সূত্রে পাওয়া এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাস তিনেকে আসানসোল শহরে ১৬টি অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ মিলেছে। কিনারা হওয়ার সংখ্যা হাতে গোনা। শহর জুড়ে অপরাধ ও দুষ্কৃতী হামলার প্রতিবাদে সম্প্রতি আসানসোল দক্ষিণ থানায় বিক্ষোভ দেখান নাগরিকদের একাংশ। তাঁরা পুলিশকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে আতঙ্ক রয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ মে শহরের এসবি গড়াই রোডে একটি তালাবন্ধ বাড়িতে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ওই বাড়ির কর্তা দেবব্রত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, দিন সাতেক পরে তিনি ফিরে এসে দেখেন ঘরের ৯টি তালাই ভেঙে পড়ে রয়েছে, আলমারিও লণ্ডভণ্ড। লুঠপাট হয়েছে বহু জিনিসপত্র। এর পরে ২২ জুন রাতে আসানসোল গ্রামের নামোপাড়ায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির একতলার গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালায়। তার পরের দিনই ভরদুপুরে আসানসোলের উষাগ্রামে একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থায় জনা কয়েক দুষ্কৃতী ঢুকে কর্মীদের একটি ঘরে বন্দি করে লুঠপাট চালিয়ে চম্পট দেয়। গত ২৭ জুলাই আসানসোলের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত আপকার গার্ডেন এলাকায় ইসিএলের আধিকারিক নীলাদ্রি রায়ের আবাসনে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। নীলাদ্রিবাবু ও তাঁর স্ত্রী তখন শহরে ছিলেন না। বড়সড় লুঠপাট হয় শুক্রবার রাতে গাড়ুইয়ে। সেখানকার বাসিন্দা প্রভাত মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে জিনিসপত্র লুঠ করে নিয়ে যায়। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
শুধু বাড়িতে লুঠপাট নয়, শহরবাসীর কাছে বড় মাথাব্যথার হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটরবাইক চুরি। ১৮ জুলাই আসানসোল গ্রামের একটি বাড়ির গেটের তালা ভেঙে একই রাতে তিনটি মোটরবাইক চুরি হয়। ঠিক পরের দিনই ওই গ্রামের অন্য একটি বাড়ি থেকে আরও একটি মোটরবাইক চুরি যায়। ১৫ জুলাই আসানসোলের ব্লু ফ্যাকট্রি রোডের একটি বাড়ির দরজা ভেঙে চুরি হয়।
এ সবের সঙ্গে যোগ হয়েছে গুলি চালানোর ঘটনা। গত ৯ জুলাই রাতে আসানসোলের হিন্দুস্তান পার্ক এলাকার এক বাসিন্দা কর্মস্থল থেকে ফিরে বাড়িতে ঢোকার মুখে গুলিবিদ্ধ হন। তাতে জড়িত অভিয়োগে পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার হয়েছে দুষ্কৃতীদের মোটরবাইক ও আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু কেন এই ঘটনা, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বাড়াচ্ছে।’’ তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভিশিবদাসন বলেন, ‘‘শহরবাসীর আতঙ্ক দূর করতে পুলিশের কাছে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আবেদন করেছি।’’
নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশের যদিও দাবি, বেশ কিছু ঘটনারই কিনারা হয়েছে। এসিপি (সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য বলেন, ‘‘পুলিশ অভিযোগের তদন্ত করছে। গুলি-কাণ্ডের কারণ জানার চেষ্টা চলছে। মোটরবাইক চোরদেরও ধরে ফেলা হবে।’’