Bardhaman

শুধুই পুজো, লোকারণ্য-ধুমধাম ছাড়া সারা হল রথযাত্রা

বর্ধমানের লক্ষ্মীনারায়ণজিউ মন্দিরে রথের পুজো হল নিয়ম মেনেই। কিন্তু রথের রশিতে টান পড়েনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০১:১৮
Share:

বর্ধমানের রথতলায়। নিজস্ব চিত্র

পুজো হল, খানিকটা করে রথ টানাও হল। কিন্তু ‘লোকারণ্য’ বা ‘মহাধুমধাম’— কোনওটাই হল না। করোনা-সংক্রমণ রুখতে এ বার নিয়মরক্ষার মতো করে পালিত হল রথযাত্রা।

Advertisement

বর্ধমানের লক্ষ্মীনারায়ণজিউ মন্দিরে রথের পুজো হল নিয়ম মেনেই। কিন্তু রথের রশিতে টান পড়েনি। মেলা বা উৎসব এ বার বন্ধ। এ দিন মূল ফটকে ভক্তদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বর্ধমানের নতুনগঞ্জে রাধাবল্লভ মন্দিরে অল্প কিছু মানুষ পুজা দিতে যান। মন্দিরের মধ্যেই রথের দড়িতে টান দিয়ে ঘোরানো হয়। তবে রথতলায় এ দিন কোনও জমায়েত হয়নি। শুধু নিয়মরক্ষার পুজা হয়েছে। মিঠাপুকুর চৈতন্যমঠেও নিয়মরক্ষায় পুজা হয়। কোনও ভক্তকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

বর্ধমানের জামালপুরের কুলীন গ্রামের রথযাত্রা প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো। কথিত রয়েছে, শ্রীচৈতন্য গ্রামে আসার পরে এখানে রথে উৎসব শুরু হয়েছিল। গ্রামের বসু পরিবার তা শুরু করেছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখন ওই পরিবারের কেউ গ্রামে থাকেন না। এলাকাবাসীই রথযাত্রার আয়োজন করেন। এ বার পুজো করে দশ হাত রথ টানা হয়েছে। অন্য বছর কয়েক হাজার লোক হয়। এ বার তা হয়নি।

Advertisement

কালনা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু পুরনো রথযাত্রা রয়েছে। শহরের জগন্নাথতলার প্রাচীন রথযাত্রা উপলক্ষে মেলা বসে। রথে জগন্নাথ ও বলরামকে পরানো হয় পিতলের হাত। এ দিন সেই জগন্নাথতলায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকা সুনসান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রীতিটুকু মেনে শুধু জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরামকে রথে তুলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্দিরে। একই ভাবে শহরের লালজি মন্দির থেকে লোহার রথ কিছুটা নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পালকি কাঁধে হাঁটেন মহকুমাশাসক (কালনা) সুমনসৌরভ মোহান্তি। তবে অন্য বারের মতো রাস্তায় বহু মানুষকে লালজি রথের দড়ি টানতে দেখা যায়নি। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন এগজ়িউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ বিশ্বাস, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, বিদায়ী কাউন্সিলর আনন্দ দত্ত।

মহকুমাশাসক ও এগজ়িউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রামসীতা মন্দিরেও যান। সেখানে প্রতি বছর রথযাত্রায় বহু পদের ভোগ দেওয়া হয়। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। উদ্যোক্তাদের তরফে তারক চৌধুরী বলেন, ‘‘অন্য বার প্রচুর মানুষকে বসিয়ে খাওয়ানো হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হয়নি। তবে মন্দিরে দূরত্ব-বিধি মেনে অনেককে প্রসাদ দেওয়া হয়েছে।’’

ভিড় ছিল না গোপাল বাড়ির রথেও। সেখানে দেখা যায়, ‘মাস্ক’ পরে পুরোহিত পুজো করছেন। কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুরেও বহু মানুষকে নিয়ে রথ টানার ঐতিহ্য এ বার বন্ধ রেখেছেন উদ্যোক্তারা। পূর্বস্থলীর গোপীনাথ মন্দিরেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উপস্থিতিতে কয়েকজন মিলে শুধু দড়ি ধরে রথের চাকা সামান্য গড়ানো হয়। মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদের দেওয়া হয় ‘মাস্ক’ এবং সাবান।

কাটোয়ায় মাধাইতলা, রাধারানি আশ্রম, গৌরাঙ্গবাড়ির সামনে রথ সাজিয়ে বিগ্রহ রাখা হয়েছিল। কিন্তু দড়ি টানা হয়নি। মন্দিরে পুজো হয়েছে। পানুহাটের মণ্ডলহাট গ্রামে ঘোষপাড়ার মন্দির থেকে রথের বদলে বিগ্রহ কোলে করে ‘মাসির বাড়ি’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আউশগ্রামের দিগনগরে জগন্নাথ মন্দিরে পুজো হয়। তবে ছাউনি থেকে রথ বার করা হয়নি। মন্তেশ্বরের পাতুন গ্রামেও শুধু পুজো হয়। এ দিন সকালে ভাতার বাজারে মহাপ্রভুতলা থেকে রথ টেনে ভাতার হাইস্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। রথযাত্রা কমিটির দাবি, গুটিকয়েক লোককে নিয়ে রথ টানা হয়েছে। সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন