ফাইল চিত্র।
হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে রাজ্যের রিপোর্ট।
জেলার ২১৫টি পঞ্চায়েত ও ২৩টি ব্লককেই ‘নির্মল’ ঘোষণা করেছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলাকে ‘নির্মল’ ঘোষণা করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিল রাজ্যে। সেই দাবি খতিয়ে দেখতে পুজোর আগে জেলায় এসেছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের একটি দল। ঘুরে দেখেছিল নানা গ্রামের পরিস্থিতি। আর তার পরেই পঞ্চায়েত দফতরের রিপোর্টে ধরা পড়ে, জেলার ৫৯টি পঞ্চায়েত এখনও ‘নির্মল’ হয়নি।
রাজ্যের প্রথম ‘পূর্ণ সাক্ষর’ এই জেলা ‘নির্মল’ হওয়ার জন্য বারবার উদ্যোগী হয়েছে। অবিভক্ত বর্ধমান জেলা ২০১৫ সাল থেকে লক্ষ্যমাত্রা নিলেও তিন বছর ধরে তা সফল হয়নি। জেলা ভাগের আগে, প্রায় এক বছর জনস্বাস্থ্য বিভাগের কোনও কর্মাধ্যক্ষ ছিল না জেলা পরিষদে। ওই দফতর সামলাতেন সভাধিপতিই। পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষ কর্তা দাবি করেন, ‘‘স্রেফ নজরদারি ও সমন্বয়ের অভাবে পূর্ব বর্ধমান ‘নির্মল’ হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে। নির্মল বাংলা প্রকল্পকে সফল করার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসককে (জেলা পরিষদ) দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
পঞ্চায়েত দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলার মান বাঁচিয়েছে বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা। সেখানকার দু’একটি পঞ্চায়েত ছাড়া ‘অব্যবস্থা’ চোখে পড়েনি দলটির। তবে বর্ধমান উত্তর মহকুমার সদরের দু’টি ব্লক বাদ দিলে বেশির ভাগ পঞ্চায়েতেই অনেকে শৌচকর্মের জন্য ‘মাঠে-ঘাটে-বাঁশবাগানে’ যান বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। একই চিত্র কাটোয়া, কালনা মহকুমাতেও।
রিপোর্টটিকে দু’টি স্তরে ভাগ করা হয়েছে—লাল ও হলুদ। যেখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ সেগুলি লাল ও যেখানে সর্তক হওয়া প্রয়োজন সেগুলি হলুদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লালের তালিকায় রয়েছে আউশগ্রাম ১ ব্লকের দু’টি, আউশগ্রাম ২ ব্লকের ৩টি, ভাতারের একটি, গলসি ১ ও ২ ব্লকের দু’টি করে পঞ্চায়েতের ১৮টি গ্রামে। হলুদের তালিকাভুক্ত হয়েছে আউশগ্রামের দু’টি, ভাতারের ছ’টি, গলসি ১ ব্লকের ছ’টি ও গলসি ২ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের ৬১টি গ্রাম। কালনা মহকুমার ভয়ঙ্কর বলে চিহ্নিত হয়েছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে তিনটি পঞ্চায়েত, মন্তেশ্বরের সাতটি, কালনা ১ ব্লকের পাঁচটি ও কালনা ২ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের ৪১টি গ্রাম। হলুদ চিহ্ন রয়েছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে একটি, মন্তেশ্বরের ৩টি ব্লকের ১২টি গ্রাম। কাটোয়া মহকুমার ১০টি পঞ্চায়েতের ২৯টি গ্রামে লাল ও মঙ্গলকোটের একটি গ্রামে হলুদ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে রিপোর্টে।
জেলা পরিষদে জনস্বাস্থ্যের কর্মাধ্যক্ষ গার্গী নাহা বলেন, ‘‘প্রতিটি মহকুমায় পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।’’ ওই সব সভায় অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় যুগ্ম বিডিওদের দায়িত্ব দিয়ে জানিয়েছেন, কোথায়-কোথায় সমস্যা রয়েছে বা হচ্ছে তার ঠিক রিপোর্ট দিতে হবে। প্রয়োজনে শৌচাগারের বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করে এফআইআর করা হবে।