এখন-তখন: বোরহান শেখ।
যুবককে চেনে। কিন্তু ‘এক সময় গ্রামে থাকত’ বা ‘টিভিতে দেখলাম, চেহারাটা বদলেছে’-এর, বেশি মুখ খুলছে না পূর্ব বর্ধমানের শিমুলিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে ধরা পড়েছে খাগড়গড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত বোরহান শেখ, যার বাড়ি শিমুলিয়া গ্রামেই। তাই টিভিতে বোরহানের খবরে চোখ যাচ্ছে অনেকেরই। কিন্তু বাইরের লোক দেখলেই কুলুপ পড়ছে মুখে।
বহু অনুরোধে মুখ খোলেন এক বৃদ্ধ। নাম না জানানোর শর্তে বলেন, ‘‘গ্রামের কে কে বোরহানের ঘনিষ্ঠ, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে নিয়মিত সে খবর নিত পুলিশ, সিআইডি, এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা)। পাছে আবার সে দিন ফিরে আসে, সেটাই ভয়!’’ শুক্রবার কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) বোরহানের বাড়িতে সমন পাঠিয়ে গ্রেফতারের ঘটনা জানায়। গোয়েন্দাদের দাবি, বোরহানের সঙ্গী, পাশের কৃষ্ণবাটি গ্রামের মহম্মদ ইউসুফকে এক বছর আগে ধরেছিল এসটিএফ। সেই সূত্রে এ বার বোরহান ধরা পড়েছে।
শিমুলিয়ার মাদ্রাসা থেকে ১০০ মিটার দূরে বোরহানের বাড়ি। তিন বছর ধরে স্ত্রী শাহনেওয়াজ বেগমকে নিয়ে তিনি বাড়িছাড়া। শাহনেওয়াজ এখনও অধরা। এ দিন বাড়িতে যেতেই বোরহানের ভাই সোলেমান শেখ দরজা আগলে বললেন, “গ্রেফতারের কথা টিভিতে দেখেছি। পুলিশ যাকে ধরেছে, তাকেই প্রশ্ন করুন, আমাদের নয়। পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।” মা আসুরা বিবির কথা জিজ্ঞাসা করতে তাঁর জবাব, ‘‘মা অসুস্থ। তাঁকে গ্রেফতারের খবর জানানো হয়নি।’’
শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় তদন্ত চালিয়ে সে সময় গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কিশোরীদের এনে সেখানে জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বিভিন্ন ভাষার জেহাদি বই, ছোট ছুরি, বক্সিং গ্লাভসের মতো জিনিসপত্রও মিলেছিল। এখন সবটাই ধ্বংসস্তূপ। চালা ভেঙে, মাটির দেওয়াল হেলে গিয়েছে মাদ্রাসার। এখান থেকে দু’কিলোমিটার দূরে ২৫ কাঠা জমির উপরে নতুন করে একটি মাদ্রাসাও তৈরি করছিলেন বোরহান ও ইউসুফ। জমিটি আট লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন তাঁরা। বড় চারটে ঘর, ১০ ফুট উঁচু পাঁচিলও গাঁথা হয়েছিল। এখন সেই দেওয়ালে ঘুঁটে দেন গ্রামবাসী।