মগ্ন: কাজে ব্যস্ত তরুণকান্তিবাবু। গুসকরার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ দিনের কর্মজীবন থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই অবসর। তার পরেই চিন্তাটা মাথায় জাঁকিয়ে বসে, সময় কাটাবেন কী ভাবে। তখনই মাথায় চাগাড়় দেয়, দীর্ঘ দিনের শখ, মূর্তি গড়ার ভাবনাচিন্তা। তার পরে থেকে মার্বেল পাথর এবং ‘হোয়াইট সিমেন্ট’ দিয়ে নানা মনীষীর মূর্তি তৈরি করছেন গুসকরার বাসিন্দা তরুণকান্তি গণ।
বছর দুয়েক আগে মঙ্গলকোটের গণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন রসায়নের শিক্ষক তরুণকান্তিবাবু। প্রথাগত কোনও শিক্ষা না থাকলেও বরাবরই ছবি আঁকা, মাটির মূর্তি তৈরি-সহ নানা কাজে তিনি যুক্ত। ছেলেবেলা থেকেই হাত পাকিয়েছেন ছবি আঁকা। যুবক বয়সে দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করা শুরু করেন। স্কুল থেকে অবসরের পরে ঠিক করি ফের মূর্তি তৈরিতে হাত দেব, বলছিলেন বছর ৬২-র তরুণকান্তিবাবু।
ইতিমধ্যেই বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের-সহ নানা মনীষীর প্রায় এগারোটি মূর্তি তৈরি করে ফেলেছেন ওই শিক্ষক। মূর্তিগুলির উচ্চতা তিন-চার ফুট। বাড়ির উঠোনটাই এই শিল্পীর ‘স্টুডিও।’ সাধারণত, মার্বেল পাথরের গুঁড়ো আর হোয়াইট সিমেন্ট দিয়েই মূর্তিগুলি তৈরি করা হয়। এক একটি মূর্তি তৈরি করতে আড়াই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। ওই শিক্ষক জানান, মূর্তি তৈরির উপকরণ গুসকরা থেকেই সংগ্রহ করেন। তবে এ পর্যন্ত মূর্তি বিক্রিতে মন সায় দেয়নি বলে দাবি ওই শিল্পীর। তবে ভবিষ্যতে কোনও প্রদর্শনীতে মূর্তিগুলি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তরুণকান্তিবাবু।
তরুণকান্তিবাবুর এই কাজে খুশি তাঁর স্ত্রী দেবযানীদেবী, পড়শি থেকে, স্কুলের সহকর্মীরাও। শিল্পীর স্ত্রী দেবযানীদেবী বলেন, “অবসরের পরে দিনরাত মূর্তি তৈরি করেন। আসলে ওতেই ওনার আনন্দ।’’ স্কুলের সহকর্মীদের অনেকেই বলেনই, ‘‘কাজ থেকে অবসর, যে কোনও মানুষের পক্ষেই অনেক সময় অবসাদ বয়ে আনে। কিন্তু সেই অবসরটুকুই তরুণকান্তিবাবু সৃষ্টিশীল কাজে লাগালেন। এটা শিক্ষনীয়।’’