নেতাদের কোন্দলে ধুন্ধুমার পুরসভায়

মঙ্গলবার বোর্ড মিটিং সবে শুরু হয়েছে। বৈঠকের দু’একটা বিষয় পড়তে শুরু করেছেন কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৩:১৩
Share:

কাটোয়া পুরসভায় বোর্ড মিটিং চলাকালীন অশান্তি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

পুর-বৈঠকে ধুন্ধুমার বাধল কাটোয়ায়। টেবিল চাপড়ে, ফোন উল্টে তৃণমূলের পুরপ্রধান তথা বিধায়কের দিকে জলের গ্লাস ছোড়ার অভিযোগ উঠল দলেরই শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর অমর রাম-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে। বিরোধ ছিলই এ বার প্রকাশ্যেও ‘দলবিরোধী’ বলে তোপ দাগলেন পরস্পরকে।

Advertisement

মঙ্গলবার বোর্ড মিটিং সবে শুরু হয়েছে। বৈঠকের দু’একটা বিষয় পড়তে শুরু করেছেন কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। আচমকা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে উঠে এসে পুরপ্রধানের টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন তিন তৃণমূল কাউন্সিলর অমর রাম, প্রণব দত্ত ও শ্যামল ঠাকুর। বচসার মাঝে পুরপ্রধানকে লক্ষ্য করে কাচের গ্লাস ছোড়া হয় বলা অভিযোগ। রবিবাবুর না লাগলেও কাচে আহত হন তিন কাউন্সিলর সুফল রাজোয়ার, সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় ও ইউসুফা খাতুন। গন্ডগোল থামাতে রবিবাবুর দুই নিরাপত্তারক্ষী ঘরে ঢোকায় চেঁচামেচি মাত্রা ছাড়ায়। ‘মিটিং হলে পুলিশ ঢুকবে কেন? আমরা কি ক্রিমিনাল নাকি?’, দাবি করে ওই তিন কাউন্সিলর বচসা, হুমকি দিতে করেন বলে অভিযোগ। পরে পুরপ্রধান বৈঠক বাতিল করে দেওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষনের অভিযোগ তুলে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন ওই তিন জন। লোকসভা ভোটে কাটোয়া বিধানসভার দলের ‘হারে’র জন্য দায়ী করে পুরপ্রধানের পদত্যাগও দাবি করেন তাঁরা।

রবিবাবুর পাল্টা দাবি, ওই তিন কাউন্সিলর কোনও বৈঠকেই আসেন না। দলে থেকেও ওই তিন জন দলবিরোধী কাজ করছেন বলেও তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘পুরো ঘটনা ঊধ্বর্তন নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। দল চাইলে পদ ছাড়তে রাজি।’’

Advertisement

অমরবাবুর অভিযোগ, ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনাস্থা এনে পুরসভা দখলের পর থেকে তাঁদের তিন জনকে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ বা বৈঠকে ডাকা হয় না। ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে প্রকৃত গরিবদের নাম বাদ দিয়ে টাকা নিয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। তাঁর দাবি, ‘‘রবিবাবু সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন না। উচ্চ নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে কাটোয়ায় ক্ষমতা কায়েম করে রেখেছেন। গত পুরবোর্ডে অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে কাটোয়ায় তৃণমূলকে এনেছিলাম আমি। এখনও কেষ্ট (অনুব্রতর ডাকনাম) মণ্ডলকে এনে কাটোয়ায় নেতৃত্ব দিক দল।’’

আর এক ‘বিক্ষুব্ধ’ কাউন্সিলর প্রণববাবুর দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটে বিধায়কের নেতৃত্বে ৮৭০৫ ভোটে পুরসভায় হেরেছে দল। উনি যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও যেখানকার কাউন্সিলর সেই দুই ওয়ার্ডেও হেরেছেন। দলের বিপর্যয়ের নৈতিক দায় নিয়ে সরে যাওয়া উচিত ওঁর।’’ কাউন্সিলর শ্যামলবাবুরও দাবি, ‘‘কাটোয়ার মানুষ যে ওঁকে চান না তা এই ভোটে স্পষ্ট। ওঁর ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতার জন্যই দল হেরেছে।’’ রবিবাবুর অনুগামীরা ‘দিনে তৃণমূল আর রাতে বিজেপি’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।

যদিও রবিবাবুর দাবি, ‘‘এ বার ভোটের ফল খারাপ হয়েছে ঠিকই। তবে সেটা মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, সিপিএমের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত ধর্মীয় মেরুকরণ। সঙ্গে অমরদের মতো গদ্দারেরা রয়েছে যাঁরা দলে থেকে দলবিরোধী প্রচারে হাওয়া দিয়েছে।’’ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘কাটোয়ার ভোটের দায়িত্বে ছিলাম না। কিছু বলতে পারব না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথও বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন