হাতি এসেছে, গুজবে ঘুম ছুটল গ্রামের

সবে রাতের খাওয়া সেরে টিভি দেখতে বসেছিলেন মালডাঙার আমিনা বিবি। আচমকা শুনতে পেলেন, হাতি ঢুকেছে। ব্যাস আরাম মাথায় উঠল। সপ্তাহ খানেক আগের দাঁতালের হামলায় চার জনের খবরটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। কিছুক্ষণের মধ্যে হুলুস্থুলু পড়ে গেল গ্রাম জুড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০২:০২
Share:

সবে রাতের খাওয়া সেরে টিভি দেখতে বসেছিলেন মালডাঙার আমিনা বিবি। আচমকা শুনতে পেলেন, হাতি ঢুকেছে। ব্যাস আরাম মাথায় উঠল। সপ্তাহ খানেক আগের দাঁতালের হামলায় চার জনের খবরটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। কিছুক্ষণের মধ্যে হুলুস্থুলু পড়ে গেল গ্রাম জুড়ে।

Advertisement

শুধু মালডাঙা নয়, বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ পাকুড়মুড়ি, মন্তেশ্বর, লোহার, কুলুট, দাদপুর-সহ প্রায় কুড়িটি গ্রামে হাতি ঢোকার খবরে আতঙ্ক ছড়ায়। দলে দলে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। মসজিদ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলে মাইকে ঘোষণাও শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে এসে পৌঁছয় পুলিশ, প্রশাসনও। ততক্ষণে বন দফতর জানায়, হাতি ঢোকেনি, খরবটা গুজব। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন গ্রামের মানুষজন। অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন, ‘ভাগ্যি হাতি আসেনি। আবার না জানি ক’জনের প্রাণ যেত!’

কিছুদিন আগেই গলসি থেকে দামোদর পেরিয়ে ভাতারে ঢুকে পড়েছিল দুটি হাতি। ভাতার থেকে এসেছিল মন্তেশ্বরে। ততক্ষণে ভাতারে দু’জনকে আছাড় মেরেছে বড় দাঁতালটি। মন্তেশ্বরেও হাতি পিষে মেরেছে দু’জনকে। দিন পার করে সন্ধ্যাতেও বাগে আনা যায়নি হাতিটিকে। বন দফতরের কর্তারা পুলিশ এনে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতিটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখেন। শেষে রাতে টানা ঘুম পাড়ানি গুলি প্রয়োগের পরে হাতিটির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। ছোটটিকেও সরিয়ে দেওয়া অন্যত্র। এত দিন পাশের বাঁকুড়ি, পুরুলিয়া, বীরভূমে হাতির হানা, খেত নষ্ট, মানুষ মৃত্যুর খবর শুনতেন মন্তেশ্বর, ভাতারের লোকজন। এ বার ‘হাতিঠাকুর’ সামনে এসে পড়ায় রুদ্র রূপের আতঙ্ক যায়নি তাঁদের। এ দিন তাই হাতি ঢুকেছে খবর ছড়াতেই ঘুম ছুটে যায় তাঁদের।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকা খবর রটে যায় যে, গলসি থেকে একটি হাতির দল বাঘাসন পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে পড়েছে। পাকুড়মুড়ি, ইন্দ্রপুর, মালডাঙা-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দলে দলে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, আগের বার এলাকায় ঢুকে পড়া হাতির গায়ের গন্ধেই না কি নতুন করে এলাকায় এসে পড়েছে হাতি। এলাকার বেশ কিছু লোক মশাল নিয়ে হাতি তাড়াতেও বেরিয়ে পড়েন। সেই দলে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্টু পণ্ডিত। তিনি জানান, কিছু দিন আগেই এলাকায় হাতির তাণ্ডব দেখেছেন তাঁরা। হাতি তাড়াতে তাই হুলা পার্টির মতোই মশাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন দল বেঁধে। খবর ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি মন্তেশ্বর, লোহার, কুলুট, দাদপুর-সহ আশেপাশের প্রায় ২০টি গ্রামে। এমনকী, বেলেজুড়ি গ্রামের মসজিদ থেকেও গ্রামবাসীদের সতর্ক করে মাইকে হাতির হানার খবর জানানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ দাস, মিলন গড়াই, অক্ষয় মোদকরা জানান, দিন পাঁচেক আগেই তাঁরা দু’জনকে মারা যেতে দেখেছেন। তাই খবর পেয়ে তাই সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। খবর ছড়িয়ে পড়ে ভাতার-সহ আশেপাশের ব্লকগুলিতেও। মিলনবাবু জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়েরা টেলিফোনে খোঁজ নিতে থাকেন।

এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তৎপর হয় মন্তেশ্বর থানা ও স্থানীয় প্রশাসন। মন্তেশ্বর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় এসে পৌঁছয়। এসে পৌঁছন মন্তেশ্বরের বিডিও শ্বাশ্বত দাঁ। তিনি যোগাযোগ করেন বন দফতরের সঙ্গে। তখন বন দফতরের তরফে জানানো হয় যে গলসি থেকে কোনও হাতি ওই এলাকায় ঢুকে পড়েনি। হাতির দল ঢুকে পড়ার খবর গুজব ছাড়া কিছুই নয়। সেই খবর জানার পরে এলাকায় আতঙ্ক কিছুটা কমে। যদিও হাতির হানার আতঙ্কে বহু মানুষই রাতটা জেগেই কাটিয়ে ফেলেছেন ততক্ষণে।

পরে বিডিও শ্বাশ্বতবাবু বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে কাটোয়া রে়ঞ্জ অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁকে একটি লিখিত চিঠি দিতে বলেছি। চিঠি পাওয়ার পরেই এলাকায় প্রচার চালানো হবে।’’ বন দফতরের তরফেও এলাকায় প্রচার চালানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement