বিশেষজ্ঞেরা আসছেন গ্রামে, আশায় সিদাবাড়ি

কখনও গ্রামে এসে মাটি পরীক্ষা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। কখনও আবার আসছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। শিবির করছে পশু বিশেষজ্ঞ দলও। গত কয়েক মাস ধরে এমন নানা কর্মকাণ্ড দেখে আশায় বুক বাঁধছে আদর্শ গ্রাম হতে চলা সালানপুরের সিদাবাড়ির বাসিন্দারা। আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দত্তক নিয়েছেন এই সিদাবাড়ি গ্রাম।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

সালানপুর শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

সিদাবাড়ি গ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।

কখনও গ্রামে এসে মাটি পরীক্ষা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। কখনও আবার আসছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। শিবির করছে পশু বিশেষজ্ঞ দলও। গত কয়েক মাস ধরে এমন নানা কর্মকাণ্ড দেখে আশায় বুক বাঁধছে আদর্শ গ্রাম হতে চলা সালানপুরের সিদাবাড়ির বাসিন্দারা।

Advertisement

আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দত্তক নিয়েছেন এই সিদাবাড়ি গ্রাম। তার পর থেকেই গ্রামে ঘুরে গিয়েছেন নানা সরকারি দফতরের বিশেষজ্ঞ দল। তারা কথা বলেছে গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে। বাসিন্দাদের আশা, গ্রামে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হলে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন মাসে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষক দল পর্যায়ক্রমে ওই গ্রাম ঘুরে দেখেছেন। যেমন, গত ১ ডিসেম্বর ওরিশা থেকে কয়েক জন ভূবিজ্ঞানি গ্রামে এসে মাটি পরীক্ষা, জমির জলধারণ ক্ষমতা পরীক্ষা করেছেন। ওই বিশেষজ্ঞরা মূলত বোঝার চেষ্টা করেছেন, এখানে পুকুর বা জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ অথবা মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র গড়া সম্ভব কি না। ৪ ডিসেম্বর কলকাতার প্রাণিসম্পদ বিকাশ কেন্দ্রের পাঁচ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল গ্রামে লাভজনক উপায়ে গবাদি পশুপালনের সম্ভাবনা ঘুরে দেখেছেন।

Advertisement

গত ১০ ডিসেম্বর এসেছিলেন ভুবনেশ্বরের ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’-এর দুই বিজ্ঞানি পি শ্রীনিবাসন ও গোবিন্দচরন আচারিয়া। তাঁরা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন। সেখানে কী জাতের ফলের চাষ হতে পারে, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেন। এলাকার বাসিন্দাদের ওই বিজ্ঞানিরা জানিয়েছেন, গ্রামের মাটি কাঁকুরে ধরনের। তবে সেখানেও বিশেষ ধরনের ফলের চাষ করা সম্ভব। তাঁরা আরও জানান, এই মাটিতে খেসারি, মুগ, মেথি, পটল, ভুট্টা ও গম চাষ বিশেষ লাভজনক হতে পারে। এমনকী, এই সব ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদনও সম্ভব। এর জন্য গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এই দুই বিজ্ঞানি সপ্তাহখানেক এলাকায় থেকে নিয়মিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। প্রায় ৮০০টি পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে ২৫ জনের একটি দল তৈরি করে বুদবুদ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথাও হয়েছে বলে স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইন্ডিয়ান ভেটেরেনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর পূর্বাঞ্চল শাখার কলকাতা অফিস থেকে গত ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর চিকিৎসক শ্যামল নস্করের নেতৃত্বে ছ’জনের একটি দল সিদাবাড়ি গ্রামে আসে। দলের সদস্যেরা গ্রামের গবাদি পশুর চিকিৎসা করেন। প্রতিষেধকও দেন। এ ছাড়া তাঁরা গ্রামবাসীদের পরামর্শ দেন, পশুদের কী ধরনের খাবার দিলে তারা সুস্থ থাকবে ও প্রজনন ক্ষমতা ঠিক থাকবে। গত ১২ ও ১৩ জানুয়ারি ওই বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যেরা গ্রামে এসে বিশেষ শিবির করেন।

গত নভেম্বরে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিজের সংসদ এলাকায় সিদাবাড়ি-সহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। শেষ পর্যন্ত বেছে নেন সিদাবাড়ি গ্রামটি। সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাবুলের উদ্যোগে খুশি বাসিন্দারা এই স্বপ্ন সফল করতে কাজে নেমে পড়েছেন। সরকারি আধিকারিকরা নানা কাজে গ্রামে পা রাখলেই তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনই এক বাসিন্দা অতিত রুজ বলেন, ‘‘আমরা খুশি। এত দিন পরে সত্যিই কেউ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন।’’ আর এক বাসিন্দা ভরত মণ্ডল জানান, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে তাঁরা গ্রামের উন্নতিতে এক হয়ে কাজ করবেন। গ্রামে আসা বিশেষজ্ঞদের সর্বোত ভাবে সাহায্যের পরামর্শ দিয়েছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসও। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘গ্রামের উন্নতি আমরা সকলেই চাই। এর জন্য সব রকমের সাহায্য করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন