ঘরে বাহমনি। নিজস্ব চিত্র।
তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর সার্টিফিকেট জমা পড়ে গিয়েছে ২২ বছর আগে। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করাই এখন পাণ্ডবেশ্বরের মধুডাঙার বাহমনি মেঝানের কাছে চ্যালেঞ্জ।
ইসিএলের মন্দারবনি কোলিয়ারির কর্মী রাম মাঝির মৃত্যু হয় ১৯৯৩ সালে। কোলিয়ারির নিয়ম অনুসারে তাঁর নিকট আত্মীয়ের চাকরি পাওয়ার কথা। কিন্তু তখন স্বামীর মৃত্যুশোক কাটিয়ে ও কোলের ছেলেকে সামলে খনিতে চাকরির দাবি জানাতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি রামবাবুর স্ত্রী বাহমনিদেবীর। তাঁর দাবি, দিন কয়েক পরে এক ব্যক্তি এসে নিজেকে মন্দারবনি এলাকার নেতা পরিচয় দিয়ে আশ্বাস দেন, স্বামীর চাকরি ও ক্ষতিপূরণ যাতে তিনি পান তার ব্যবস্থা করবেন। সে জন্য স্বামীর মৃত্যুর সার্টিফিকেট-সহ কিছু নথিপত্র চান। তিনি বিশ্বাস করে সে সব তুলে দেন তাঁর হাতে।
বাহমনিদেবী জানান, এর পরে বছর দশেক কেটে গিয়েছে। তাঁর ছেলে স্বপনের বয়স বছর সতেরো হয়েছে। তিনি ছেলেকে নিয়োগের দাবি জানাতে যান মন্দারবনি খনিতে। আর সেখানে গিয়েই মাথায় বাজ পড়ে। খনি কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৯৪ সালেই তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত শংসাপত্র জমা প়ড়ে গিয়েছে। এমনটা কী ভাবে হতে পারে, তা খোঁজ করতে ছেলেকে নিয়ে নানা অফিসে দৌড়দৌড়ি শুরু হয়।
স্বপন জানান, তাঁরা যেখানকার বাসিন্দা সেই নবগ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে দরবার করেন তিনি। পঞ্চায়েত থেকে বাহমনিদেবী জীবিত, এই মর্মে একটি শংসাপত্রও বের করেন। সেটি সংশ্লিষ্ট নানা জায়গায় জমা দিলেও ফল হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। স্বপন বলেন, ‘‘এখন কোর্টে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।’’
ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি জানার পরে আমরাও অবাক হয়ে যাই।’’ তাঁর দাবি, ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা জেনেছেন, বাহমনিদেবীর নামে যে মৃত্যু সার্টিফিকেট জমা পড়েছিল সেটি বীরভূমের খয়রাশোল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়া। বাহমনিদেবীর আইনজীবী সঞ্জয় জোশী বলেন, ‘‘সব জানার পরে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। মাস দুয়েক আগে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া পেনশন ও ছেলের চাকরির দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও ফল হয়নি। কে বা কারা ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দিল, তা ধরা পড়েনি। নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে মামলা দায়ের করব।’’ পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
মন্দারবনি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৯৩ সালে রামবাবু ও ১৯৯৪ সালে বাহমনিদেবীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট জমা পড়েছে তাঁদের কাছে। এর বেশি কিছু বলা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের আগে জন্ম-মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেওয়া হতো ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও। ব্লক সেনেটরি ইনস্পেক্টর তা দিতেন। কিন্তু তার পরে পুরসভা বা পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়। বীরভূমের সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘ঘটনাটি অনেক দিন আগের। বিশদ না জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরী সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘অনেক পুরনো ঘটনা। তবে বিষয়টি নজরে এসেছে। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’