খুচরো সঙ্কটে পাকা ধান মাঠেই, ক্ষোভ

কয়েকদিন পরেই নবান্ন। কিন্তু তার আগে নতুন ধান ঘরে উঠবে কি না, সে চিন্তাতেই দিন কাটছে জেলার অধিকাংশ চাষি পরিবারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

জমিতে পড়ে ধান। নিজস্ব চিত্র।

কয়েকদিন পরেই নবান্ন। কিন্তু তার আগে নতুন ধান ঘরে উঠবে কি না, সে চিন্তাতেই দিন কাটছে জেলার অধিকাংশ চাষি পরিবারের।

Advertisement

এক দিকে, জমি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও টাকার অভাবে বীজ কিনতে না পারায় চাষ শুরু করতে পারছেন না আলুচাষিরা। আবার খুচরো-সঙ্কটে শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পারায় পাকা ধান মাঠে পড়ে রয়েছে অনেক চাষির। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে ধান কাটা যন্ত্রের। কিন্তু যোগান কম থাকায় তাতেও সমস্যা মিটছে না।

চাষিদের এই সমস্যা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তাঁর কথায়, “রাজ্যের প্রায় ৭০০ পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক নেই। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। মু্খ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যসচিব ও কৃষি সচিবকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।” জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ৪ লক্ষ ২১ হাজার ৬০০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। অন্য বছর এই সময় ধান কাটার কাজ অর্ধেকের বেশি হয়ে যায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি জমিতে ধান কাটতে পেরেছেন চাষিরা। যদিও জেলার কৃষি কর্তাদের ধারণা, ব্যাঙ্ক ‘সচল’ হলে ধান কাটার গতি বাড়বে।

Advertisement

জেলা শ্রম দফতরের হিসেবে, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া তো বটেই ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকেও ফি বছর সাত থেকে আট হাজার কৃষি শ্রমিক বর্ধমানে আসেন। কাটোয়া ও রায়নার সেহেরাবাজার স্টেশনে তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, পুরনো টাকার মতোই নতুন দু’হাজার টাকাও ওই সব শ্রমিকেরা নিতে চাইছেন না। আবার ৫০-১০০ টাকার আকাল থাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে মঙ্গলকোটের খতিয়ার সহ জেলার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের শাখায় মঙ্গলবার বিক্ষোভও দেখিয়েছেন চাষিরা।

গোতিষ্ঠা গ্রামের চাষি মাধবকুমার ঘোষ বলেন, “এখন ধান কাটার মরসুম। অন্য বছর অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। এ বার শ্রমিকই পাচ্ছি না। আবার ধান কাটার যন্ত্রও মিলছে না।” দারসিনি গ্রামের নারায়ণ মণ্ডল, ববি বিবিদের কথায়, “কয়েকদিন পরেই নবান্ন। নতুন ধান তুলতে পারব কবে, সে চিন্তায় মাথায় ঘুরছে।’’ মেমারির তাজপুরের অজুত আলি বলেন, ‘‘চার বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফলনও ভাল হয়েছে। টাকা থাকার পরেও কৃষি শ্রমিকের মজুরি দিতে পারব না বলে ঘরে ধান তুলতে পারছি না। দুশ্চিন্তায় ঘুম উবে গিয়েছে।” জাবুই গ্রামের সুবল ঘোষ কিংবা পাহাড়হাটির রাজকুমার শেখদেরও প্রশ্ন, “চার হাজার টাকায় সংসার চালাব না মাঠে পড়ে থাকা ধান কাটব, বলতে পারেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন