দুর্গাপুর থেকে কালনার দিকে উড়ে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার। দুর্গাপুরের সাধুডাঙায়। ছবি: বিকাশ মশান
২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই দুই এলাকাতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ফের লোকসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ওই দুই এলাকা, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জে ‘বিশেষ নজর’ দিচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব, মনে করছে বিরোধীদের একাংশ। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থল হিসেবে জামুড়িয়াকে বেছে নেওয়া ও তাঁর বক্তৃতার একাংশ জুড়ে রানিগঞ্জের কথা, এমনই অনুমান বিরোধীদের।
যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন শুক্রবার বলেন, “সব পঞ্চায়েত, পুরসভা তৃণমূলেরই দখলে। জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ একসময়ের বাম-গড় হিসেবে পরিচিত হলেও তারা কোনও কাজ করেনি। এই দুই এলাকা-সহ গোটা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার আনার লক্ষ্য নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই উন্নয়ন ছাড়া সভাস্থল বা বক্তৃতার বিষয় নিয়ে অন্য কোনও কারণ খোঁজা আসলে সময় নষ্ট।।’’
তবে বিরোধীদের একাংশের মতে, এই দুই এলাকায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে সাফল্য পায়নি তৃণমূল। লোকসভা ভোটের নিরিখে, সে বার জামুড়িয়ায় সিপিএমের থেকে আটশো ও রানিগঞ্জে বিজেপি-র তুলনায় দশ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বিধানসভায় ২০১১-র নির্বাচন বাদে ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিবারই রানিগঞ্জে এবং প্রায় চার দশক ধরে জামুড়িয়ায় টানা রয়েছেন সিপিএমের বিধায়ক। এমনকি, ২০১৮-র পঞ্চায়েতেও রানিগঞ্জের আমরাসোঁতা পঞ্চায়েত ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএম জেতে। ২০১৬-র আসানসোল পুরসভায় রানিগঞ্জের ১১টি ওয়ার্ডের পাঁচটিতে ও জামুড়িয়ার ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টিতে জেতে সিপিএম।
তা ছাড়া এই দু’টি এলাকাই শ্রমিক অধ্যুষিত। তৃণমূল প্রভাবিত কেকেএসসি-র সংগঠন কিছু জায়গায় থাকলেও সিটু, আইএনটিইউসি, এইচএমএস, বিএমস ও এআইটিইউসি-র সংযুক্ত জোটের প্রভাবই তাঁদের মধ্যে বেশি বলে জানান শ্রমিকেরা।
তৃণমূল নেতৃত্ব গত পঞ্চায়েতে এই দুই এলাকায় নির্বাচনী সাফল্যের কথা বলছে। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি-র অভিযোগ, পঞ্চায়েতে শাসক দলের সন্ত্রাসের জন্যই তারা সে ভাবে টক্কর দিতে পারেনি। লোকসভায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকে। ফলে সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাসের সুযোগও কম থাকবে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জামুড়িয়া থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘নয়া রানিগঞ্জ গড়ে তোলা হবে।’’ যদিও রানিগঞ্জে যানজট-সহ নাগরিক সমস্যা, জামুড়িয়ার জল-সমস্যা এ যাবৎ সমাধান করা যায়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের মতে, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের পরেও জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জে নানা বিষয়ে আমাদের মিছিল, আন্দোলনে মানুষের ভিড়ই বলে দিচ্ছে, শাসক দলের পালে হাওয়া নেই। তাই, এই দুই এলাকার জন্য ‘বিশেষ নজর’ দিতে নানা প্রকল্পের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে মানুষকে প্রলোভন দেখালেন। কিন্তু সে সব প্রকল্প কবে রূপায়ণ করা হবে কেউ জানে না।’’ বিজেপি-র আসানসোল জেলা কমিটির সম্পাদক জিতেন চট্টোপাধ্যায়ের আবার দাবি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়াকে শাসক দলের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ, ওখানে বিজেপি-র সংগঠন বৃদ্ধি। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, জামুড়িয়াকে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল হিসেবে বেছে নেওয়া ও বক্তৃতায় রানিগঞ্জ থাকার একমাত্র কারণ, উন্নয়নে জোর দেওয়া।