ছৌপদী প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা দিতে অভিযান

নেপালের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৫ সালে এই কুপ্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে নেপাল সরকার আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি

নেপালের ‘ছৌপদী’ প্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ বেস ক্যাম্প অভিযানে যাচ্ছেন দুর্গাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। আজ, শনিবার ১৫ জনের দলটি রওনা দেবে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দলে রয়েছেন দুই মহিলাও। নেপালের ‘প্যাড ম্যান’ হিসেবে পরিচিত জ্ঞান মহার্জন পরিচালিত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হবে নানা কর্মসূচি। জ্ঞান মহার্জন নিজেও থাকবেন। ২৪ অক্টোবর দলটি আবার দুর্গাপুর ফিরবে।

Advertisement

‘ছৌপদী’ প্রথা কী?

হিন্দু পরিবারে কোনও মেলে ঋতুমতী হলে তাঁকে পরিবারের সমস্ত কাজ থেকে ব্রাত্য করে রাখা হয়। স্কুলেও যেতে দেওয়া হয় না। মাসিকের সময়ে মেয়েরা অপবিত্র থাকেন বলে মনে করা হয়। এই ধারণা থেকেই মাসের ওই দিনগুলিতে বাড়ির বাইরে কোনও পরিত্যক্ত স্থানে বা গোয়ালঘরে রেখে দেওয়া হয়। এই সময় দুধ, ফল জাতীয় কোনও পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া হয় না মেয়েদের। শুধু তাই নয় খাবারের পরিমাণও কম থাকে। পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় তাঁদের বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে পা দেওয়া নিষিদ্ধ। ঠান্ডা লাগলেও এই সময় কম্বল ব্যবহার করতে পারেন না মেয়েরা। তাঁদের পাটের তৈরি এক ধরনের কাপড় দেওয়া হয়, যা গায়ে দিতে হয়।

Advertisement

‘ছৌপদী’ প্রথাকে ঘিরে কী কুসংস্কার রয়েছে? মনে করা হয়, যদি ঋতুমতী অবস্থায় কোনও মেয়ে গাছকে স্পর্শ করে তা হলে সেই গাছ আর ফল দেবে না। যদি সে দুধ পান করে তা হলে গাভী দুধ দেবে না। এই অবস্থায় পড়াশোনা করলে বিদ্যার দেবী সরস্বতী রুষ্ঠ হবেন। এই সময় কোনও পুরুষকে স্পর্শ করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

এই প্রথা মানতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৫ সালে এই কুপ্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে নেপাল সরকার আইন করে এই প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রথা মানতে বাধ্য করা হলে তিন মাসের জেল ও তিন হাজার টাকা (নেপালি টাকায়) জরিমানা করা হবে। তবু এখনও সেই প্রথা চলছে বলে অভিযোগ।

দুর্গাপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বিশ্বব্রত কুমার জানান, নেপালে গিয়ে তাঁরা জ্ঞান মহার্জনের সঙ্গে মিলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের উপযোগিতা, ন্যাপকিন বিলি ও ছৌপদী প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচারের কর্মসূচি নেবেন। নেপালে অবস্থিত, অন্নপূর্ণা শৃঙ্গের বেস ক্যাম্প অভিযানে অভিযাত্রী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্বব্রতবাবু। তিনি জানান, তাঁদের অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোয়েস্ট ফর হোলি ব্লাড’। ঋতুকালীন সময়ে মেয়েদের কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় সে বিষয়ে সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে পোখরা ও তার আশপাশের এলাকায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার তরফে দলটিকে অভিনন্দন জানানো হয়। অভিযানে ব্যয় হবে প্রায় পৌনে ৫ লক্ষ টাকা। সংস্থার তরফে ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছরভর দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকায় নানা সামাজিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ বার তা আরও ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন