পমি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সে। এর মধ্যেই তিনটি বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছে। পাঁচ স্কুলছুটকে ফিরিয়ে এনেছে স্কুলে। তার সঙ্গে এলাকার অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করতে অন্যদেরও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। বর্ধমান শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর মাঠের পমি মাহাতো সত্যিই ‘বীরাঙ্গনা’। আগামী ২০ নভেম্বর তাকে এই সম্মান জানাবে রাজ্য সরকার।
সুভাষপল্লি হরিসভা স্কুলের এই ছাত্রী নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। সেখান থেকেই হাতেখড়ি সমাজের কাজে। এক কামরার ঘরে থেকেই শুরু লড়াই। স্কুলে শেখানো নাবালিকা বিয়ের কুফল নাড়া দেয় তাকে। এলাকায় তেমন কোনও ঘটনার কথা শুনলেই ছুটে যায় পমি। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ওই কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করে ফেরায় লেখাপড়ায়।
পমি বলে, ‘‘স্কুলে কন্যাশ্রী থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। বাল্যবিবাহের কুফল, পড়াশোনা করার সুফল। তারপরে দেখলাম আমাদের এলাকাতেই সমস্যা বেশি। লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকা নিয়ে অনেকের খারাপ ধারণাও রয়েছে। কারণ এক সময় নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসত এখানে। এলাকাকে বদলানোর কাজ শুরু করি আমরাই।’’ জানা গিয়েছে, ওই সংস্থার সাহায্যে এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘হ্যাপি চিলড্রেন ক্লাব’ গড়া হয়। তারাই খোঁজখবর নিয়ে আসে, কারা হঠাৎ পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে বা কোন মেয়ের আঠারো বছরের আগেই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো পৌঁছে যান সংস্থার সদস্যেরা। এ ছাড়াও তামাকবিরোধী নানা কর্মসূচিও নেওয়া হয়।
পমির বাবা গৌতম মাহাতো গ্যারাজে কাজ করেন। মা অরিতাদেবী গৃহবধূ। একমাত্র মেয়ে পমি জানায়, প্রথমে কেউ খুব একটা এগিয়ে আসেননি। কিন্তু এখন হ্যাপি চিলড্রেন ক্লাবের সদস্য তিনশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। পমির সম্মানের কথা শুনে গর্বিত সঞ্জনা মণ্ডল, সাহিল খটিক, জয়তী দাসরা। তারাও পমির সঙ্গেই কাজ করে। এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর শুক্তিশুভ্র সাহানাও কুর্নিশ জানিয়েছেন এই ছাত্রীকে।
আরও পড়ুন: আগুন সর্বোচ্চ বাড়িতে, ঠুঁটো দমকল বাহিনী
জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রশান্ত রায় জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘চাইল্ড প্রোটেকশন অ্যান্ড চাইল্ড রাইট কমিশনে’র তরফে শিশুর অধিকার সপ্তাহের শেষ দিন তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এই কাজ অন্যদের উৎসাহ জোগাবে বলেও তাঁর আশা।