ধর্মঘট নিয়ে তরজার মাঝে চিন্তা পরীক্ষায়

নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি, নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ-সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং নানা দাবিতে  ২৪ ঘণ্টার এই ধর্মঘট ডেকেছে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩৯
Share:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।—ফাইল চিত্র।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা রয়েছে বেশ কিছু। ধর্মঘটের দিন পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে কেন্দ্রে পৌঁছবেন, মঙ্গলবার তা নিয়ে চাপান-উতোর চলল বর্ধমানে। এসএফআইয়ের তরফে পরীক্ষা পিছনোর দাবি জানানো হলেও তা করা হচ্ছে না বলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আজ, বুধবারের ধর্মঘটের পক্ষে-বিপক্ষে মঙ্গলবার থেকেই পথে নামল নানা পক্ষ।

Advertisement

নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি, নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ-সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং নানা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার এই ধর্মঘট ডেকেছে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। সমর্থন করেছে বাম ও কংগ্রস-সহ নানা রাজনৈতিক দল। ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার সকাল থেকেই বর্ধমানে তারা পথে নামবে বলে জানিয়েছে সিপিএম এবং সিটু। তবে বিরোধিতায় তৃণমূল বা বিজেপি নামবে কি না, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি এ দিন পর্যন্ত।

আজ, বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে নানা বিষয়ে পরীক্ষা রয়েছে। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, বীরভূমের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ ছাড়া আজ, জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষা রয়েছে। অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কাছাকাছি হোটেলে গিয়ে উঠছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার স্নাতক স্তরে প্রায় ২৫টি বিষয় ও স্নাতকোত্তর স্তরে ২২টি বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী ও সভাপতি বিশ্বরূপ হাজরা দাবি করেছেন, ধর্মঘটের নোটিস দীর্ঘদিন আগে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে দিন পরীক্ষা রেখেছেন। তাঁরা উপাচার্যের কাছে পরীক্ষার দিন পাল্টানোর আর্জি জানিয়েছেন। ওই দুই নেতা দাবি করেন, ‘‘যানবাহনের সমস্যার জন্য অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় বা সংশ্লিষ্ট কলেজে পৌঁছতে পারবেন না।’’ টিএমসিপি নেতা অভিষেক নন্দীর পাল্টা বক্তব্য, “স্নাতকোত্তর স্তরের বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই হস্টেলে থাকেন। অন্য পরীক্ষার্থীদের বাড়িও দূরে নয়। তাই কোনও অসুবিধা হবে না।’’ বিশ্বদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পরীক্ষা বাতিলের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

Advertisement

ধর্মঘটের দিন সব সরকারি কর্মীর হাজিরা নিশ্চিত করতে ‘নবান্ন’ নির্দেশিকা জারি করেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনও তা সমস্ত কর্মীকে জানিয়ে দিয়েছে। তা অমান্য করলে ওই দিনের বেতন কাটার পাশাপাশি, সংশ্লিষ্টের কর্মদিবস থেকে এক দিন বাদ দেওয়া হবে। তবে হঠাৎ অসুস্থ হলে বা নির্দিষ্ট কাজের জন্য আগে থেকে ছুটি নেওয়া থাকলে ছাড় পাওয়া যাবে। তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের পূর্ব বর্ধমান শাখা মঙ্গলবার দুপুরে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্মঘটের বিরোধিতায় সরব হয়। সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁইয়ের অভিযোগ, ‘‘বাজার নিম্নমুখী। এর পরে বন্‌ধ করলে মানুষ আরও সমস্যায় পড়বেন।’’

কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের বক্তব্য, ‘‘আমরা ধর্মঘটের সমর্থনে নানা ভাবে মানুষকে বোঝাব। আর এই ধর্মঘট ভাঙার জন্যে তৃণমূল বা পুলিশ রাস্তায় নামলে জনগণ বুঝে যাবে, রাজ্যের শাসকদল আসলে দিল্লিকেই খুশি করতে চাইছে।’’ সিটুর জেলা সভাপতি (পূর্ব বর্ধমান) অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে পরিস্থিতিই আসুক, আমরা রাস্তায় থাকব।’’ কংগ্রেস নেতা রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ও জানান, বন্‌ধের সমর্থনে রাস্তায় থাকতে বলা হয়েছে দলের সবাইকে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা নতুন নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি-র প্রতিবাদে ধারাবাহিক প্রচার চালাচ্ছি। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি। তা বলে কর্মনাশা বন্‌ধ সমর্থন করা যায় না। জেলার প্রতিটি স্তরের কর্মীকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে বলা হয়েছে।’’ তবে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার কোনও নির্দেশ মেলেনি বলে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের অনেকের দাবি।

ধর্মঘট তুলতে তাঁরা রাস্তায় নামবেন কি না, তা পরিষ্কার করে জানাননি বিজেপি নেতারাও। দলের সাংগঠনিক জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি সন্দীপ নন্দীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি-র বন্‌ধ তুলতে তৃণমূল ও পুলিশ সক্রিয় থাকে। জনবিরোধী এই ধর্মঘট নিষ্ক্রিয় করতে তারা কী করে, তা দেখতে চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন