dpl

DPL: ডিপিএলের জমি নিয়ে হল ‘সমীক্ষা’

ঋণভারে জর্জরিত ডিপিএল পুনর্গঠনে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ও কর্মীদের অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

শুক্রবার দুর্গাপুরের পিয়ালা এলাকায় পরিদর্শনে প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।

ডিপিএলের উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করে রুগ্‌ণ ডিপিএল-কে বাঁচানোর বিষয়টিকে সামনে রেখে পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক, বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে বৃহস্পতিবার, এমনই খবর নবান্ন সূত্রে। এর পরেই, শুক্রবার সকালে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) এবং ডিপিএলের আধিকারিকেরা দুর্গাপুরে সংস্থার অব্যবহৃত জমির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। সূত্রের খবর, পরে দু’দফার বৈঠকে ডিপিএল-এর ‘দখল’ হয়ে যাওয়া জমি কী ভাবে পুনরুদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। যদিও এ বিষয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশের প্রশ্ন, জমি বেচার টাকা আদৌ ডিপিএল বাঁচাতে ব্যবহৃত হবে তো! যদিও আইএনটিটিইউসি-র জেলা নেতারা এ আশঙ্কায় গুরুত্ব দিতে চাননি।

Advertisement

ঋণভারে জর্জরিত ডিপিএল পুনর্গঠনে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ও কর্মীদের অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সে ভাবে কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া, সংস্থার উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। গত ৩ জুন বিদ্যুৎমন্ত্রী ডিপিএলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিক্রি করার মতো ডিপিএলের কোথায়, কত অব্যবহৃত জমি রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, সেই মতো প্রাথমিক ভাবে বিধাননগরে প্রায় ১৩৪ একর জমির তালিকা তৈরি করেন ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার নবান্নে আয়োজিত বৈঠকে তা জানান ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। বাকি জমির কী পরিস্থিতি সে সম্পর্কেও দ্রুত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন, এডিডিএ ও ডিপিএলের আধিকারিকেরা ডিপিএল সংলগ্ন পিয়ালা এলাকায় ডিপিএলের জমির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। ছিলেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) বিভু গোয়েল, পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুর, ডিপিএলের এমডি গৌতম বিশ্বাস-সহ অন্যরা। অভিযোগ, ডিপিএলের জমি বলে চিহ্নিতকরণ বোর্ড থাকলেও বহু জমিতেই অবৈধ ভাবে বসবাস চলছে কয়েক দশক ধরে। এ দিন, মানচিত্র মিলিয়ে সেই সব জমিগুলিকে চিহ্নিত করা হয় বলে সূত্রের খবর। এলাকায় গিয়েও বিষয়টি জানা গিয়েছে। পিয়ালার বাসিন্দা গীতা বাগদি বলেন, ‘‘আমার বাবা প্রায় ২৫ বছর আগে এখানে বসবাস শুরু করেছিলেন। তার পরে থেকে আমি আছি। জানি, ডিপিএলের জমি। কিন্তু আমাদের আর থাকার জায়গা নেই।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন এডিডিএ ভবন এবং ডিপিএল গেস্ট হাউসে দু’দফায় এ বিষয়ে বৈঠক হয়। দখল হয়ে যাওয়া জমি কী ভাবে পুনরুদ্ধার করা যাবে সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক। ডিপিএলের এমডি গৌতম বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জমির সমীক্ষা করা হল।’’

Advertisement

এ দিকে, ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ কয়েক বছরে গড়ে দু’শো কোটি টাকা করে লোকসানে চলছিল এই সংস্থা। তার উপরে সপ্তম ইউনিট গড়ে তোলার সময় কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন লিমিটেড’ (পিএফসিএল)-এর কাছে ১,৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। পরে, অষ্টম ইউনিট গড়ার সময় আরও ২,১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয় ওই সংস্থা থেকে। সুদ মেটাতে না পারায় ডিপিএলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ়’ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরের দিকে সব মিলিয়ে দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩,৫০০
কোটি টাকা।

সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘ডিপিএলের পুনরুজ্জীবনের নাম করে যে ভাবে হঠাৎ জমি বিক্রি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার তাতে প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। আমাদের দাবি, শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে শিল্পই গড়তে হবে।’’ ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করে সে অর্থ যেন ডিপিএলকে বাঁচানোর কাজেই ব্যবহৃত হয়।’’ সংশয় উড়িয়ে আইএনটিটিইউসি-র জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘ডিপিএলকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা উদ্যোগী, তা সবাই জানেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন