পরিদর্শকের হঠাৎ হানা

অজুহাত নয়, সময়ে আসুন স্কুলে

ঠিক যেমনটা ঘটল বুধবার। প্রার্থনার পরে স্কুলে এলেন আট শিক্ষক। তাঁদেরকে শো-কজ করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য পরিচালন সমিতিকে নির্দেশ দেন জেলা স্কুল পরিদর্শক।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০১:২৬
Share:

নজরদারি: খাজা আনোয়ার শহিদ বেড় হাইস্কুলে কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

‘রোগ’ কিছুতেই সারছে না। স্কুলে দেরিতে ঢোকা বা স্কুল থেকে আগে বেরনোর ‘রোগ’। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের এই ‘রোগে’ এতই বিরক্ত পূর্ব বর্ধমান জেলা শিক্ষা দফতর যে, বিভিন্ন স্কুলে হঠাৎ হানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাতেনাতে শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে ধরতে পারলেই তাঁদের কপালে জুটছে শিক্ষাকর্তাদের ধমক।

Advertisement

ঠিক যেমনটা ঘটল বুধবার। বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার শহিদ বেড় হাইস্কুলে। ওই স্কুলের গেটে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হাজির হয়ে যান জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ রায় এবং সহকারী পরিদর্শক গোপাল পাল। হাতেগরম প্রমাণও পেয়ে গেলেন তাঁরা। প্রার্থনার পরে স্কুলে এলেন আট শিক্ষক। তাঁদের প্রত্যেককে ভর্ৎসনা করে খগেন্দ্রনাথবাবু স্পষ্ট বলে দিলেন, “কোনও অজুহাত নয়। সাড়ে ১০টার মধ্যে স্কুলে আসবেন। সাড়ে চারটের সময় বেরোবেন।” তাঁদেরকে শো-কজ করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য পরিচালন সমিতিকে নির্দেশ দেন জেলা স্কুল পরিদর্শক।

জেলার স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই ‘রোগ’ অবশ্য নতুন নয়। মাসখানেক আগের ঘটনা। মেমারির এক স্কুলে কয়েক জন শিক্ষিকাকে নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াতে বাধ্য করা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার ধুন্ধুমার বাধে। তাতে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছিল। একটা সময় স্কুলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষিকাকে ‘ছুটি’তে পর্যন্ত পাঠায় প্রশাসন। শেষে স্কুল পরিদর্শকের হস্তক্ষেপে প্রধান শিক্ষিকা ফের কাজে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

দেরিতে আসা বা তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবশ্য অজুহাত রয়েছে। কারও দেরি করার কারণ ট্রেন, তো কারও বাস। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা স্কুলের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারই যাওয়া-আসা নির্ভর করে ট্রেন কিংবা বাসের সময় ধরে। অনেক সময় দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত স্কুলে কোনও কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রায় রোজই সাড়ে ১০টার জায়গা ১১টায় ঢুকছেন। আবার ছুটি হওয়ার সময় সাড়ে চারটে হলেও অনেক আগেই কেউ কেউ ট্রেন বা বাস ধরার জন্য স্কুল থেকে বেরিয়ে যান। অভিযোগ, ওই সব শিক্ষক-শিক্ষিকার একাংশ প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে প্রথম বা শেষ দু’টি পিরিয়ডে তাঁদের ক্লাস না রাখার জন্য ‘অনুরোধ’ করেন। অনুরোধ ধীরে ধীরে হয় চাপ। তা থেকে এক সময় স্কুলে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়।

এই ঘটনা আর বরদাস্ত করতে রাজি নয় শিক্ষা দফতর। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে এই ‘নিয়মানুবর্তিতা’ আনার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঠিক হয়েছে, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) ও মহকুমা স্তরে সহকারী পরিদর্শকের (এআই) নেতৃত্বে একটি দল আচমকা স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতা দেখবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর স্কুলে ঢুকলেই হাজিরা খাতায় পড়বে ‘লাল কালি’। একই রকম ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্কুল থেকে চলে গেলেও ‘লাল কালি’ দেওয়া হবে। দু’টি ক্ষেত্রেই স্কুল পরিচালন সমিতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শো-কজ করে রিপোর্ট জমা দেবে দফতরে। খগেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ট্রেন বা বাসের সময় ধরে স্কুলে যাতায়াত চলবে না। সরকারি নিয়ম মানতেই হবে। সে জন্যই আচমকা স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতা দেখছি।”

গত ক’দিন ধরে শহরের বেশ কিছু স্কুলে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে খগেন্দ্রনাথবাবু ও গোপালবাবু। তাঁদের কথায়, “আমরা বেশ কয়েক জন শিক্ষককে শো-কজ করার জন্য বলেছি। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজের মতো নামী স্কুলের একাধিক শিক্ষকও সাড়ে তিনটে সময় বাড়ি যাওয়ার পথ ধরেছিলেন। আমাদের দেখে ফিরে আসেন। তাঁরা ক্ষমাও চেয়েছেন। ওই স্কুল আমাদের নজরে আছে।” তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি রথীন মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘স্কুলে দেরিতে আসা বা তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। তার ফলে যাঁরা ঠিক সময়ে স্কুলে আসেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়েন। শিক্ষা দফতর সঠিক পদক্ষেপ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন