অবৈধ খননকে দোষ কেন্দায়

পরিত্যক্ত খনির ধোঁয়ায় ফের উদ্বেগ

পরিত্যক্ত খনির আগুন ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে বছরখানেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পাশের ভূগর্ভস্থ খনি। সম্প্রতি তা ফের চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিত্যক্ত খনি এলাকায় ফের ধস ও মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোনোর ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কেন্দায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

পরিত্যক্ত খনির গর্ত থেকে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

পরিত্যক্ত খনির আগুন ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে বছরখানেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পাশের ভূগর্ভস্থ খনি। সম্প্রতি তা ফের চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিত্যক্ত খনি এলাকায় ফের ধস ও মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোনোর ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কেন্দায়।

Advertisement

ইসিএলের পরিত্যক্ত ওয়েস্ট কেন্দা খোলামুখ খনি এলাকার তিন জায়গায় সোমবার ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। এলাকা থেকে দু’শো মিটার দূরে ২০ ফুট জুড়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। খনি চত্বর থেকে পূর্ব দিকে আধ কিলোমিটার দূরে তিন নম্বর ধাওড়া, দক্ষিণে এক কিলোমিটার দূরে শালডাঙা। এলাকাবাসী জানান, ধোঁয়া বেরোতে থাকায় তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, খনি চত্বরের পশ্চিমে অবৈধ ভাবে কয়লা কাটা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অবৈধ খননকে দায়ী করেছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষও।

২০১৭ সালের ২২ জুলাই এই পরিত্যক্ত খনি চত্বরে প্রথমে এক জায়গায় ধোঁয়া বেরোনো শুরু হয়। এর পরে তার পাশেই বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩ নম্বর ভূগর্ভস্থ খনিমুখ থেকে ধোঁওয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সে বছর ২৬ জুলাই থেকে ডিরেক্টর জেনারল অব মানইস সেফটি-র (ডিজিএমএস) নির্দেশে চালু থাকা ভূগর্ভস্থ ৪ নম্বর খনিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১১ মাস পরে তা আবার চালু করা হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই সময়ে অবৈধ খননের জেরেই পরিত্যক্ত খোলামুখ খনিতে ধোঁয়া ও আগুন বেরোচ্ছিল। আবার একই কারণে এমন বিপত্তি ঘটেছে। ভূগর্ভে কয়লার স্তরে আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কাতেই ডিজিএমএস খনি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। আগুন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার পরে ডিজিএমএসের নিদের্শেই ৪ নম্বর খনিটি আবার চালু করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ খনন চলতে থাকলে আবার ৪ নম্বর খনিটি বন্ধ করে দিতে হতে পারে বলে ইসিএলের আধিকারিকদের আশঙ্কা।

Advertisement

তিন নম্বর নীচে ধাওড়ার বাসিন্দা পূজা পাসোয়ান, শালডাঙার গুড্ডু পাসোয়ানদের দাবি, গত বছর ধোঁয়ার মুখ বন্ধ করার জন্য ছাই ফেলা হলেও তা ঠিক পদ্ধতিতে হয়নি। সে জন্য আবার সেই একই জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লক সভাপতি মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চার পাশে ইসিএলের নিউকেন্দা কোলিয়ারির খনি রয়েছে। মাঝখানে দ্বীপের মতো রয়েছে কেন্দা গ্রাম। এই গ্রামেই আটের দশকের গোড়ার দিকে ধস নেমেছিল। এক বাসিন্দার বাড়ি ভূগর্ভে চলে যায়। তার পরে এলাকার নানা জায়গায় বারবার ধস নেমেছে। এক বছর আগে বন্ধ খনি চত্বর থেকে ধোঁয়া ও আগুন বেরোনো শুরু হয়। আবার ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ১৯৯৮ সালে এলাকা ধসপ্রবণ ও বসবাসের পক্ষে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার পর থেকেই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের সঙ্গে বাস করছেন। দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে বারবার। কিন্তু এখনও কোনও বন্দোবস্ত হয়নি।

ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘অবৈধ খননের জেরেই ধোঁয়া ও আগুন বেরোনোর ঘটনা ঘটেছে। আমরা মাটি ভরাট করে আগুন নেভানোর কাজ করছি। পুলিশ-প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন