বন্ধ কারখানায় বেশি লক্ষ্য দুষ্কৃতীদের। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও বন্ধ কারখানার শেড ভেঙে জিনসপত্র চুরি, কখনও বা নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে রেখে লুঠপাট— সাম্প্রতিক সময়ে বারবার এমন ছবি দেখা গিয়েছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পতালুকে। গত মঙ্গলবার ফের চুরির উদ্দেশ্যে একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় ঢুকেছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। পরপর এমন ঘটনার পরে বিভিন্ন কারখানা মালিকেরা শিল্পতালুকগুলিতে পুলিশি টহল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে, রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় আচমকা কয়েক জনকে ঢুকতে দেখে চোর বলে সন্দেহ হয় রক্ষীদের। চিৎকার করে তাদের বেরিয়ে যেতে বললেও পালায়নি তারা। লাভ হয়নি শূন্যে গুলি ছুড়েও। শেষমেশ মাটিতে তাক করে গুলি ছুড়লে পালায় বহিরাগতরা। তবে সেই গুলিতেই এক জন জখম হয় বলে খবর। সেই দুষ্কৃতীকে উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করায় পুলিশ।
কারখানা মালিকদের বক্তব্য, শুধু এই ঘটনায় নয়। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন কারখানায় চলছে দুষ্কৃতীদের উৎপাত। যেমন, ২০১৫-র ১০ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরের বন্ধ হয়ে যাওয়া হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কারখানার ভিতর থেকে শেড ভেঙে লোহা ও যন্ত্রপাতি চুরি করতে আসে কয়েক জনা দুষ্কৃতী। তবে সে যাত্রা ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ২টি পাইপগান উদ্ধার হয়। ৫ এপ্রিল ফের ওই একই কারখানায় লুঠপাট চালাতে আসে কয়েক জন। পুলিশ দেখে বোমা ছোড়ার হুমকি দেয় তারা। তবে পুলিশ তাদের তাড়া করার সময় নিজেদেরই বোমা ফেটে জখম হয় ৩ দুষ্কৃতী। তাদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের জালে ধরা পড়ে ৫ জন দুষ্কৃতী।
দুষ্কৃতী-উৎপাতের শিকার কাঁকসার বামুনাড়া শিল্পতালুকও। ২০১৫-র ১৯ অগস্ট ওই এলাকার একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানা থেকে তামার প্লেট, কেবল, জলের পাম্প লুঠ হয়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষীরা বিপদঘণ্টা বাজালে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ওই বছরেই ৭ সেপ্টেম্বর বামুনাড়া শিল্পতালুকের অন্য একটি ইস্পাত কারখানায় দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সিলিকো-ম্যাঙ্গানিজ, ইলেকট্রিক্যাল মনিটর প্রভৃতি লুঠ করে নিয়ে যায়। একই সময়ে পরপর ৩টি কারখানা থেকে খোওয়া যায় তামার তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। ওই ঘটনার পরেই ব্যবস্থার দাবিতে পুলিশের কাছে সরব হন শিল্পপতিরা। শেষমেশ ১০ জনের একটি দুষ্কৃতী দলকে পাকড়াও করে পুলিশ। ধৃতেরা প্রায় সকলেই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা বলে পুলিশ জানায়। উদ্ধার হয় বেশ কিছু খোওয়া যাওয়া সামগ্রী।
২০১৬ সালেও দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে লাগাম পড়েনি। এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার সরপিতে একটি বেসরকারি কারখানায় ১০-১২ জন দুষ্কৃতীর একটি দল হানা দেয়। দু’জন রক্ষীকে বেঁধে রেখে তামার তার, মূল্যবান যন্ত্রাংশ প্রভৃতি লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। যাওয়ার আগে সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার জন্য কম্পিউটারে ভাঙচুর চালিয়ে হার্ড ডিস্ক নিয়ে পালায় তারা। যদিও তিন দিনের মধ্যে ৩ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এই পরিস্থিতিতে শিল্পপতিদের দাবি, বারবার এমন ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রাতের পালিতে কাজ করতে আসা শ্রমিকেরাও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রেছেন। সব মিলিয়ে আখেরে উৎপাদনের ক্ষতি হচ্ছে বলে কারখানা-মালিকদের দাবি। বামুনাড়া ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্করলাল অগ্রবাল বলেন, ও সম্পাদক অশোক সরাফের দাবি, ‘‘পুলিশি টহল বাড়াতে হবে। শিল্পতালুকের সুনিশ্চিত করতে হবে।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পূর্ব) সুব্রত দেেবর আশ্বাস, ‘‘মোটরবাইক ও ভ্যানে করে নির্দিষ্ট রুট ধরে নিয়মিত টহল চলে। টহলের রুট আরও বাড়ানো হবে।’’