নানা ছুতোয় বাড়িতে ঢুকে ছিনতাই, আতঙ্ক

বাড়ি, মন্দিরে চুরি তো বটেই, ভরা রাস্তাতেও একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে কালনা শহরে। ক্ষুব্ধ শহরবাসীর অভিযোগ, কয়েক মাসের মধ্যেই ১৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের কাছে বারবার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েও দুষ্কর্ম কমছে না বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

বাড়ি, মন্দিরে চুরি তো বটেই, ভরা রাস্তাতেও একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে কালনা শহরে। ক্ষুব্ধ শহরবাসীর অভিযোগ, কয়েক মাসের মধ্যেই ১৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের কাছে বারবার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েও দুষ্কর্ম কমছে না বলে তাঁদের দাবি। দিনেদুপুরে একের পর এক ছিনতাইয়ে আতঙ্কও ছড়িয়েছে শহরে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে শেষ চুরিটি হয়েছে গত শনিবার রাতে। তালা ভেঙে কৃষ্ণদেবপুর মহিলা উচ্চবিদ্যালয়ে ঢুকে নগদ টাকাপয়সা, রান্নার বাসন-সহ বেশ কিছু সামগ্রী নিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। সোমবার স্কুলের তরফে এ ব্যাপারে একটি অভিযোগও জানানো হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, অনেক সময় নানা অছিলায় ডেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়েছে বাড়িতে। আবার কখনও চলন্ত মোটরবাইকে ধাওয়া করছে ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনো গ্রাহক অথবা গলায় সোনার হার থাকা মহিলাদের। হাটেবাজারে একটু অসাবধান হলেই খোওয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোনও। দুষ্কৃতীরা হানা থেকে ছাড় পাচ্ছে না শহরের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলিও।

তবে সব থেকে বেশি আলোচনা চলছে বাড়িতে ঢোকা চোরেদের নিয়ে। চায়ের দোকান, রেলষ্টেশন, বাজারে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে চোরেদের দৌরাত্ম্যের নানা কাহিনী। লালবাগান পাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা সাবিত্রী বাগচী যেমন জানান, গত ৭ জুলাই সকালে বাড়ির বারান্দায় কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। আচমকা এক যুবক উঁকি দিয়ে জানতে চায়, পাড়ার অমিত বলে কাউকে তিনি চেনেন কি না। বৃদ্ধা কাছে এসে কথা বলতে গেলেই তাঁর গলা থেকে একটানে ভরি দেড়েকের হারটি ছিনিয়ে যুবকটি দৌড় দেয় বলে অভিযোগ। চকবাজার এলাকার এক বাড়িতেও এক মহিলার গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই মহিলা কোনও রকমে বারান্দায় বেরিয়ে চিৎকার করায় পালিয়ে যায় যুবকটি। সম্প্রতি ১০৮ শিবমন্দির লাগোয়া রানাপ্রতাপ সাহার বাড়িতেও চুরির চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। জিনিস খোওয়া না গেলেও সব লন্ডভন্ড করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ৫ জুলাই শহরের পশু হাসপাতালের কাছে দেবব্রত প্রামাণিক নামে এক ব্যাক্তিকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুষ্কৃতী। এমনকী স্কুলে ঢুকে শিক্ষকের ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। বাসিন্দাদের দাবি, একা বা কয়েকজন মিলে মোটরবাইর নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকজন দুষ্কৃতী। সুযোগ পেলেই হার, ব্যাগ, নিদেন পক্ষে মোবাইল নিয়ে পালাচ্ছে। কালনা শহর বিজেপির তরফেও পুলিশের কাছে এ ধরনের ১৪টি ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাতেও। কালনার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সোমলতা সরকার বলেন, ‘‘যে ভাবে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটেছে তাতে রাস্তাঘাটে বেরোনো মুশকিল হয়ে পড়েছে। পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক বাসিন্দা কল্পনা ঘোষও বলেন, ‘‘সোনার হার পরে থাকতেই ভয় পাচ্ছি। মনে হচ্ছে বেরোলেই কেউ ছিনিয়ে নেবে।’’

Advertisement

শহরের নানা ব্যাঙ্কের আশপাশে চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও শহরবাসীর দাবি। অনেকসময় ক্রেতা সেজে ব্যঙ্কের ভেতরেও থাকছে দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে রঞ্জনকুমার দে নামে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় চোরেরা। ব্যাগে নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা ছাড়াও বেশ কিছু দরকারি নথি ছিল। সপ্তাহ খানেক আগে শহরের একটি ব্যাঙ্কে ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা তুলতে এসেছিলেন কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষ পঞ্চায়েতের ঝিঁকরা গ্রামের নিজামুদ্দিন শেখ। টাকা তুলে মাকে মোটরবাইকে ব্যাঙ্ক চত্বর ছাড়াতেই কয়েকজন দুষ্কৃতী ধাওয়া করে ওই অর্থ ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। চকবাজার এলাকায় মোবাই চোর সন্দেহে এক জনকে ধরে মারধর করার ঘটনাও ঘটে দিনকয়েক আগে।

পুলিশের দাবি, ছোটখাটো চুরিগুলির সঙ্গে হেরোইনের নেশায় আসক্ত কিছু যুবক জড়িয়ে রয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মহকুমার এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমস্যা হচ্ছে, এদের ধরার পরে নেশার উপকরণ না পেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’’ বাকি ঘটনা এবং পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন