প্রতীকী চিত্র। ফাইল চিত্র
ঘরে শুয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রী। তাঁর পাশেই গুলি করে খুন করা হয়েছিল রায়নার জীবনকানাই সেনগুপ্তকে (৭৪)। দশ দিনের মধ্যে ওই ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে খুনে জড়িত অভিযোগে বর্ধমান শহর থেকে এক বিজেপি নেতা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা হলেন বেলকাশের জয়ন্ত সাঁতরা, সরাইটিকরের সিরাজউদ্দিন মণ্ডল ওরফে টগর শেখ ও বেচারহাটের গৌতম মণ্ডল। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সূত্রহীন অবস্থা থেকে তদন্ত শুরু করা হয়। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ)-র নেতৃত্বে বিশেষ দল গড়ে তদন্ত করা হয়। ধৃতেরা জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে।’’
জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, ভোটের আবহে এক বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় ওই বিশেষ তদন্তকারী দল যে গতিতে কাজ করেছে তাতে পুলিশের উপরে সাধারণ মানুষষের ভরসা বাড়বে। পুলিশ জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে সিরাজউদ্দিনকে, বাকি দু’জনকে বর্ধমান থানা এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। গৌতম ও সিরাজের নামে বিভিন্ন থানায় দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। জয়ন্ত বিজেপির বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের ২৭ নম্বর জেলা পরিষদের শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ বলেও জানা গিয়েছে। ভোটের মুখে নিরীহ বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় দলের নেতা জড়িয়ে পড়ায় ‘অস্বস্তিতে’ বিজেপি। যদিও দলের এক জেলা নেতা শ্যামল রায়ের দাবি, “সুযোগ বুঝে মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ আজ, শনিবার তাঁদের বর্ধমান জেলা আদালতে তোলা হবে।
৯ মার্চ রায়না বাজারের ডাকঘরের কাছে খুন হন জীবনকানাইবাবু। ওই দম্পতি ছাড়াও বাড়িতে থাকেন নিহতের বৃদ্ধা বৌদি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে জানা যায়, নিহতের বৌদি, অভিযোগকারী সুতপাদেবী কয়েক মাস আগে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভাঙেন। সেই সময়ে বর্ধমানের সরাইটিকর থেকে এক মহিলা প্রায় দু’মাস ওই বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। ঘটনার আগে ও পরে একটি মোটরবাইকে তিন জনকে যেতেও দেখেছিলেন বলে পুলিশকে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সিরাজের শাশুড়ি নিহতের বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। তিনিই বাড়ি গিয়ে গল্প করার ফাঁকে জানিয়েছিলেন, তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ওই বাড়িতে থাকেন। বৃদ্ধের ঘরের আলমারিতে কয়েক লক্ষ টাকা রয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। পুলিশের দাবি, এর পরেই সিরাজ কী ভাবে টাকা লুট করা যায় তার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনায় যোগ দেয় বন্ধু গৌতমও। পুলিশ জেনেছে, ঘটনার চার দিন আগে এলাকায় গিয়ে রেইকি করে আসেন তাঁরা। ঘটনার দিন জয়ন্তকে সঙ্গে নিয়ে গৌতমের মোটরবাইকে রায়না বাজারে যান তিন জন। কিছুটা দূরে মোটরবাইক রেখে হেঁটে নিহতের বাড়ির কাছে যান তাঁরা। পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় তাঁদের জানিয়েছে, ঘরের ভিতর বৃদ্ধ একটি চেয়ারে বসে টিভি দেখছিলেন। তাঁদের দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মত লাফিয়ে উঠে চিৎকার শুরু করেন। তখনই মুখ চেপে তাঁদের কাছে থাকে একনলা বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়, দাবি ধৃতদের। এসডিপিও আমিনুল ইসলাম বলেন, “ফোন-সহ বিভিন্ন সূত্র ধরে খুনে জড়িতদের কাছে পৌঁছনো গিয়েছে।’’