বেজায় গরম, বন্ধ জেলার তিন আদালত

ফের বর্ধমান আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিলেন আইনজীবীরা। সঙ্গী কাটোয়া ও কালনা আদালতও। বর্ধমানের আইনজীবীদের দাবি, সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। চলবে বৃহস্পতিবারবার পর্যন্ত। কালনা ও কাটোয়া মহকুমায় অবশ্য কাজ বন্ধ থাকবে বাড়তি আর এক দিন। ফলে একেবারে রবিবারের ছুটি কাটিয়ে আদালতে যোগ দেবেন আইনজীবীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

সুনসান বর্ধমান আদালত চত্বর।—নিজস্ব চিত্র।

ফের বর্ধমান আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিলেন আইনজীবীরা। সঙ্গী কাটোয়া ও কালনা আদালতও।

Advertisement

বর্ধমানের আইনজীবীদের দাবি, সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। চলবে বৃহস্পতিবারবার পর্যন্ত। কালনা ও কাটোয়া মহকুমায় অবশ্য কাজ বন্ধ থাকবে বাড়তি আর এক দিন। ফলে একেবারে রবিবারের ছুটি কাটিয়ে আদালতে যোগ দেবেন আইনজীবীরা।

এমনিতে হাইকোর্টে গরমের ছুটি থাকলেও জেলা বা মহকুমা আদালতে গরমের ছুটি থাকে না। ফলে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে বিচারের আশায় মঙ্গলবার হাজির হয়েছিলেন আদালতে। আচমকা কর্মবিরতির কথা জেনে তাঁদের দাবি, ‘‘গরমে কাজ করতে অসুবিধার দোহাই দিয়ে আইনজীবীরা দিব্যি ছুটি নিয়ে নিচ্ছেন। আর আমরা রোদ মাথায় এসে ফিরে যাচ্ছি।’’ যদিও আইনজীবীজের দাবি, প্রচণ্ড দাবদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বিচারপ্রার্থী থেকে আইনজীবী সকলেই। অনেক আদালতে ঠিকঠাক বসার জায়গা বা পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে বাধ্য হয়েই কর্মবিরতি ডাকা হয়েছে।

Advertisement

গত সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবারও কর্মবিরতি করেছিলেন বর্ধমান জেলা আদালতের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, গরমে বিচারপ্রার্থীদের ভিড়ও কমে গিয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, “গত কুড়ি দিন ধরে দশ শতাংশ বিচারপ্রার্থীও আদালতমুখো হচ্ছেন না। যাঁরা আসছেন, তাঁরাও গলদঘর্ম হয়ে কিংবা অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।” বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা গণতান্ত্রিক আইনজীবী সঙ্ঘের জেলা কমিটির সদস্য রামেন্দ্রসুন্দর মণ্ডলের আবার দাবি, ‘‘লোকসান তো আমাদেরও হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন আইনজীবীদের। কিন্তু কী করা যাবে, লু বইছে তো! কাজ করতে গিয়ে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাতে তো বিচারপ্রার্থীরা আরও সমস্যায় পড়বেন।” তবে বার অ্যাসোসিয়েশন যতই কর্মবিরতির যুক্তি খুঁজুক, বিচারপ্রার্থীরা যে গলদঘর্ম হয়ে আদালতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন তা বোঝাই যাচ্ছে।

এ দিন মন্তেশ্বর থেকে মামলা সংক্রান্ত কাজে কালনা আদালতে এসেছিলেন বালিজুড়ির বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘‘বহু দূর থেকে মামলা নিয়ে কালনা আদালতে এসেছিলাম। এসে জানতে পারলাম কর্মবিরতি চলছে। হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। এতটা পথ বেকার আসা হল।’’ কাটোয়া আদালতেও খুনের মামলায় অভিযুক্ত মুর্শিদাবাদের ভরতপুরপুর থানার একটি পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান মামনত শেখকে তোলা হয়। কিন্তু কর্মবিরতি চলায় কোনও আইনজীবী মামলা লড়েনি। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকা বেশ কয়েকজনকে বর্ধমান জেলা ও কাটোয়া আদালতে তোলা হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের হয়ে আইনজীবীরা ওকালতনামাতে সই পর্যন্ত করেননি।

শুধু বিচারপ্রার্থী নন, কর্মবিরতির ফলে আদালতকে ঘিরে যাঁদের জীবন চলে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাও। আড়ালে, একান্তে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন তাঁদের অনেকেই। বর্ধমান জেলা আদালতে প্রায় ৭৫ জন টাইপিস্ট রয়েছেন। আদালতের বারন্দায় কিংবা গাছতলায় বসে মামলা সংক্রান্ত নথি, বয়ান টাইপ করেন তাঁরা। সোমবার থেকেই বন্ধ টাইপের ‘খটখট’ শব্দ। বর্ধমানের এক টাইপিস্ট বলেন, “টাইপ না করলে আমাদের মতো বেশিরভাগেরই সংসার চালানো দায়। পরপর চারদিন আদালত বন্ধ। কী খাব তাই ভাবছি। বলতে পারেন, গরম আগে না পেট আগে?” কাটোয়া আদালতের এক টাইপিস্টও বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “কর্মবিরতি করলেও আইনজীবীদের আয়ে তো ঘাটতি হবে না। কিন্তু আমাদের মতো যাঁরা আদালতের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের পেটে টান পড়ছে। কর্মবিরতি করার আগে আমাদের কথা ভাবা উচিত ছিল।” কর্মবিরতি চলায় ব্যবসায় টান পড়েছে আদালতের সামনে থাকা চায়ের দোকান থেকে ছোট হোটেলের ব্যবসাদারদেরও। এই রকমই এক হোটেলের ব্যবসায়ী বলেন, “আদালত চলার সময়ে আমাদের হোটেলে দিনে ১০০ জন লোক আসেন। কিন্তু এখন পাঁচ জনও আসছে না। লোকসান তো হচ্ছেই।’’

কালনাতেও ২২মে থেকে কর্মবিরতি চলছিল। পরে সোমবার আদালত খোলে। মঙ্গলবার ফের কর্মবিরতি ডাকেন আইনজীবীরা। কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পার্থসারথী করের দাবি, ‘‘আদালতে আইনজীবীদের বসার জায়গা নেই, পানীয় জলের অভাব রয়েছে। ফলে গরমে কাজ করা যাচ্ছে না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’ তবে ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন এবং আইনজীবীদের একাংশই ফের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ। ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সনৎ প্রামাণিকের দাবি, ‘‘আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টানা বন্ধে সমস্যায় পড়েছে বিচারপ্রার্থীরা। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আমাদেরও।’’ সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ এক আইনজীবীও বলেন, ‘‘এতে সাধারণ মানুষ হয়রান তো হচ্ছেনই আমাদের পেশারও ক্ষতি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন