এই সভা ঘিরেই বিতর্ক। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
আসানসোলে দলীয় প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার সমর্থনে আয়োজিত তৃণমূলের কর্মিসভা। শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরে আয়োজিত ওই সভামঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, সেই পাপ্পু সিংহ নিজেকে দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সূত্রের খবর, মঞ্চে পাপ্পুর উপস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন কয়েক জন তৃণমূল কাউন্সিলর। পাশাপাশি, তাঁরা দাবি করেন, ওই সভায় তাঁদের অসম্মান করা হয়েছে। এই চাপান-উতোরের নেপথ্যে কুলটির তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিমান আচার্য ও দলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের ‘দ্বন্দ্ব’ দেখছেন অনেকেই। ওই দুই নেতা তা মানেননি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রার্থী শত্রুঘ্ন উপস্থিত হওয়ার কিছু ক্ষণ আগে দলীয় কয়েক জন কাউন্সিলর অভিযোগ করতে থাকেন, তাঁরা সম্মান পাচ্ছেন না। তাঁরা সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান বলেও দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলরের মন্তব্য: “মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পাপ্পু সিংহ। ওঁর জন্য বিশেষ কারণে আমাদের দলের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। কস্মিনকালেও তৃণমূলের সঙ্গে যোগ নেই, এমন কয়েক জনকে মঞ্চে বসতে দেওয়া হয়েছে। অথচ, আমাদের মতো বিজয়ী কাউন্সিলরদের অনেককেই মঞ্চে বসার অনুমতি দেওয়া হল না।”
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি বিমান আচার্য সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, “কাউন্সিলরদের মঞ্চে বসার অনুমতি না দেওয়া নিয়ে ক্ষোভের কথা শুনেছি। এর ফলে, কাউন্সিলরেরা অসম্মানিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।” তবে এ দিন এই চাপান-উতোরের মধ্যে জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশ দাবি করছেন, এর নেপথ্যে থাকতেই পারে বিমান এবং উজ্জ্বলের ‘দ্বন্দ্ব’-ও। যদিও দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি বিমানের। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁর সংযোজন: “ওই সভার বিষয়ে আমার কিছু করণীয় নেই। কারণ, সেটির সব দায়িত্ব পালন করেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।”
এ দিকে, দলীয় কাউন্সিলরদের অভিযোগ প্রসঙ্গে উজ্জ্বলের মন্তব্য, “এলাকায় দলের ১৯ জন কাউন্সিলরকে মঞ্চে বসানোর মতো জায়গা ছিল না। তবে নীচে বসার ব্যবস্থা ছিল।” পাশাপাশি, পাপ্পু প্রসঙ্গে উজ্জ্বলের দাবি, “ওঁকে মঞ্চে চাপতে দেওয়া হবে না, এমন কোনও নির্দেশ দল আমাকে দেয়নি। তাই আমি কাউকে বাধা দিতে পারি না।” পাপ্পুর প্রতিক্রিয়া, “আমি দীর্ঘদিনের দলের নেতা। ফলে, আমাকে নিয়ে কারও আপত্তি নেই।”
তবে ঘটনার কথা চাউর হতেই টিপ্পনী কেটেছে বিজেপি। বিজেপির কুলটির বিধায়ক অজয় পোদ্দারের বক্তব্য, “তৃণমূল দলটা যে কোন্দলে জেরবার, সেটা প্রতিদিন বোঝা যাচ্ছে।” দ্বন্দ্বের কথা না মেনেও পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়।
ঘটনাচক্রে, ২০১৪, ২০১৯-এর লোকসভা, ২০২১-এর বিধানসভায় কুলটিতে বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল তৃণমূল। জেলার রাজনীতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল অংশের মতে, এর নেপথ্যে বড় কারণ ছিল, কুলটিতে তৃণমূলের ‘কোন্দল’। ফের ভোটের আগে এমন ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসাটা মোটেই ভাল লক্ষণ নয় বলেই দাবি তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের। বিধানও বলেন, “লোকসভা ও বিধানসভায় কুলটিতে আমরা হেরেছি। সুতরাং, এখানে ভাল ফল করতে হলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”