গুলিবিদ্ধ নেতা। নিজস্ব চিত্র।
অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফেরার পথে এক তৃণমূল নেতাকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে মঙ্গলকোটের মজলিশদিঘির পাড়ের ঘটনা। যদিও সিপিএমের দাবি, যাঁদের নামে হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে, তাঁরা সদ্য ঘরে ফিরেছেন। ফের তাদের ঘরছাড়া করতেই শাসকদলের তরফে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ একটি অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফিরছিলেন মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান চন্দন সরকার। জাহিরুল শেখ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেন, আচমকা রাস্তায় বোমা ছোড়া হয়। এর ফলে চন্দনবাবু রাস্তায় পড়ে গেলে তাঁকে লক্ষ করে এক দুষ্কৃতী গুলি চালায়। ডান পায়ে গুলি লাগে ওই নেতার। চন্দনবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে কলকাতার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গুলি চালানোর ঘটনায় সিপিএমের প্রাক্তন উপপ্রধান ডাবলু আনসারি-সহ ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে চন্দনবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘খুন করতেই গুলি চালানো হয়। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে বেশির ভাগই রাজ্যে পালাবদলের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ঘরছাড়া ছিলেন। শেষমেশ প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রতি ৩১ জন ঘরছাড়া সিপিএম নেতা-কর্মী ঘরে ফেরেন। ফের তাঁদের ঘরছাড়া করতেই এমন ‘হামলা’র অভিযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। যদিও এ দিন সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হতে দেখা যায় মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চোধুরী। এ দিন দুপুরে চন্দনবাবুকে হাসপাতালে দেখে আসার পর জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘রবিবারই মঙ্গলকোটের নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে ৩৭ জনের নাম দিয়ে বলেছিলাম, এঁরা থাকলে মঙ্গলকোটে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। দু’দিনের মাথায় আমাদের নেতা আক্রান্ত হল। এর দায় নির্বাচন কমিশনের।’’
যদিও সিপিএমের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “নিরাপত্তাহীনতায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকও গোটা ঘটনাকে তৃণমূলের ‘নাটক ও অন্তর্দ্বন্দ্ব’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘ দীন ধরে প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি করে ঘরছাড়াদের ফেরানো হয়। তারপর আবার তাঁরা ঘরছাড়া হন। নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হলে তাঁদের ঘরে ফেরানো হয়। রবিবার সদ্য ঘরে ফেরারা দলের পতাকা টাঙিয়েছেন। তাই তাঁদের ঘরছাড়া করতে তৃণমূল এমন পরিকল্পনা নিয়েছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যান বর্ধমানের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”